ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে ইরানি তেল কেনায় চীনের রেকর্ড


প্রকাশ: 11/11/2023


Thumbnail

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে দেশটির তেল খাতকে লক্ষ্য করে আমেরিকা কঠোর অবরোধ আরোপ করেছে। ইরান তেল রপ্তানির ওপর প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরান তেল উৎপাদন অব্যাহত রাখে। বর্তমানে ইরানের জ্বালানী তেল উত্তোলন রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে। এই তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পিছনে কারণ হচ্ছে চীন। 

সম্প্রতি ইরানের কাছ থেকে চীন প্রচুর পরিমানে জ্বালানি তেল কিনছে। এ ছাড়া চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকেও তেল কেনে। তবে ইরানের তেল বিশ্ববাজারের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি ১০-১২ ডলার ছাড়ে পাওয়া যায়, যেখানে রাশিয়ার তেলে ছাড় পাওয়া পায় ব্যারেলে ৫ ডলার। তাই ইরানের তেলই বেশি কিনছে যুক্তরাষ্ট্র।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস বাহিনীর হামলার পর হামাসকে ইরানের দীর্ঘদিন ধরে পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। ধারণ করা হচ্ছে ইরানের আর্থিক ও সামরিকখাতে সাহায্য করার ফলে হামাস এমন সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছেন। তবে ইরান হামাস বাহিনীর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে।

এ পরিস্থিতিতে ইরানের তেল ব্যবসার লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেটা হলো, বিশ্বের যেসব বন্দর ও পরিশোধনাগার ইরানের তেল প্রক্রিয়াজাত করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে। তবে নতুন আইন প্রয়োগ করলেও সেটি চীনের কারণে কতটুক সফল হবে তা বলা যাচ্ছে না।

বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারী দেশ হচ্ছে চীন। চলতি বছর তেহরান তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বড় ধরনের ছাড়ে তেল বিক্রি করছে। সে জন্যও ইরানের কাছ থেকে চীনের তেল কেনা বেড়েছে। তারাই ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় গ্রাহক।

হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে চীন ইরানের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ৫ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ২০১৭ সালে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসার আগের সময়ের চেয়ে যা ৬০ শতাংশ বেশি। অক্টোবর মাসে ইরানের দৈনিক তেল উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল যা ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ।

এদিকে জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ভরটেক্সার তথ্যানুসারে, অক্টোবরে ইরান থেকে চীন দৈনিক গড়ে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। মাসিক ভিত্তিতে দেখা যায়, চীন কখনোই ইরানের কাছ থেকে আগে এতটা তেল কেনেনি।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, চীন কীভাবে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দুই কার্গো তেল কেনা ছাড়া ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের পর চীন ইরানের কাছ থেকে আর কোনো তেল কেনেনি বলে কাগজপত্রে দেখা যায়। তবে ইরানের যত তেল চীনে প্রবেশ করে, তার প্রায় সবই মালয়েশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে বলে দেখানো হয়।

ইরানের তেল যেসকল জাহাজ বহন করবে সেসব জাহাজ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন হবে। এমন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ইরান থেকে তেল আনছে চীন। ইরানরে তেল পরিবহনের জন্য নামগোত্রহীন ডার্ক ফ্লিট করা হয়। 

ইরানের বন্দরে পৌছে তারা ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে নিজেদের আড়াল করে।এসব জাহাজ নিজেদের অবস্থান লুকিয়ে বা নির্ধারিত স্থানের বাইরে আরেক জাহাজে তেল তুলে দেয় বা এমনকি প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তেল পরিবহন করে। 

চীন ইরান থেকে যত তেল কেনে, তার ৯৫ শতাংশই যায় সব ছোট ছোট তেল পরিশোধনাগারগুলোতে।নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে বাঁচতে চীনের এই ছোট পরিশোধনাগারগুলো চীনা মুদ্রায় লেনদেন করে, ডলারে নয়। এ কৌশলের মধ্য দিয়ে ইরান নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল কেনাবেচা করতে পারছে। ২০২১ সালের পর থেকে ইরানের পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে জড়িত ১৮০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া চলাচল নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে ৪০টি জাহাজ।





প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭