ইনসাইড পলিটিক্স

মঈন খান বনাম রুহুল কবির রিজভী


প্রকাশ: 11/11/2023


Thumbnail

বিএনপিতে এখন সুস্পষ্ট দুটি ধারা তৈরি হয়েছে। একটি ধারা মনে করছে যে কোনো মূল্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখা উচিত। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনে যাওয়া হবে আত্মহত্যা। নির্বাচনে গিয়ে এই সরকারকে বৈধতা দেওয়া হবে। অন্য একটি ধারা যারা মনে করছেন যে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার চাপ দিচ্ছে। বিএনপি এই নির্বাচনে যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে আন্তর্জাতিক সমস্ত সমর্থন এবং সহানুভূতি হারাবে। আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে একটি মতামত তৈরি হয়েছে যে আন্তর্জাতিক পরামর্শে নির্বাচনে যাওয়া, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অথবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। আর এই দুই মত নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রিজভী মনে করেন যে, বিএনপির আর হারানোর কিছু নেই। এখন যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে এটি হবে আত্মহত্যার সামিল। এই দলের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না এবং সাধারণ মানুষ এই দলকে আর বিশ্বাসও করবেন না। 

অন্যদিকে মঈন খান মনে করছেন যে বিএনপি যে আজকের অবস্থানে এসেছে তা আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সহানুভূতির কারণে। এখন যদি বিএনপি আন্তর্জাতিক পরামর্শ না শুনে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মতামত উপেক্ষা করে তাহলে পরে সেটি বিএনপির জন্যই সর্বনাশের কারণ হবে। এটি করা উচিত হবে না। 

যারা আন্দোলনের পক্ষে তাদের নেতা রুহুল কবির রিজভী মনে করেন যে, বিএনপির এখন আর পিছু হটার কোন সময় নেই। তারা মনে করছেন, এ রকম আন্দোলন করতে করতে নির্বাচন পর্যন্ত যদি তারা টিকে থাকতে পারেন, তাহলে সেই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্যতা না পায় তাহলে পরে এই সরকারও টিকে থাকবে না। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল হস্তক্ষেপ করবে। তারা নানা রকম নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। 

অন্যদিকে মঈন খান সহ যারা নির্বাচন পন্থী বলে ধারণা করা হচ্ছে তারা বলছেন যে বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কটের ডাক শুরু থেকে দেয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকে তাহলে সেটা হবে তাদের কৌশলগত ভুল। কারণ এর ফলে বিএনপি নির্বাচন চায় না এমন একটি মনোভাব স্পষ্ট হবে এবং আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে সমর্থন দেবে না। এর ফলে আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচন করে ফেলা কোনো কঠিন কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ যদি কোনো ভাবে একটি নির্বাচন করতে পারে তাহলে পরে তারা আবার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। বিশেষ করে ২০১৪ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা খুব সুস্পষ্ট। কারণ আওয়ামী লীগ তখন একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল যে নির্বাচনে দেড়শোর বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ঐ নির্বাচিত সরকার পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেছিল। তাই এবারও যদি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। বরং ওই সরকারও পরবর্তীতে দর কষাকষি করে তাদের মেয়াদ পূর্ণ করবে। বিশেষ করে ভারত যেখানে তাদের পক্ষে আছে সেখানে নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। এজন্যই বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। এটি বিএনপির জন্য একমাত্র উপায় বলে তারা মনে করছেন। এই নিয়ে গত রাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 

ব্বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, এসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডন থেকে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে। এখন দেখা যাক বিএনপি কি করে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭