প্রকাশ: 12/11/2023
চারদিকে পানি মধ্য খানে রানী। চারদিকে না থাকলেও নীলফামারী সদর
উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানীর মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনদিকেই
রয়েছে পানি। বিদ্যালয়টি মধ্যখানে রানী হয়ে রয়েছে। বিদ্যালয়টির গা ঘেষে পূর্ব,
পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে রয়েছে ছয়টি পুকুর, নেই কোনো বাউন্ডারী ওয়াল। উত্তরদিকে একটি
বাড়ী থাকলেও বাড়ীর পিছনে পুকুরের দেড় ফুট প্রশস্ত পাড় দিয়ে ঝুকি নিয়ে
বিদ্যালয় যাতায়াত করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে এতে চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছে
ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। যেকোনো মুহুর্তে তাদের সাথে ঘটতে পারে
অনাঙ্খিত ঘটনা। যার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে সব-সময় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুকাইয়া আক্তার বলেন,‘পুকুরের মাল্লি দিয়ে স্কুলে আসতে
খুবই ভয় করে। না জানি কখন যে পিছলে পড়ে যাই।’ দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আসফিয়া
মনি বলেন,‘আমাদের স্কুলের চারদিকে পানি। স্যার-ম্যাডামরা তাই ক্লাস থেকে বের হতে
দেয় না। স্কুলে কোনো খেলার মাঠও নেই।’
শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবু সুফিয়ান বলেন,‘স্কুলের চর্তুদিকে পানি। পুকুরের মাল্লির (পাড়) উপর দিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখন কি দূর্ঘটনা ঘটে বলা যায় না। তবুও ঝুকি নিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।’আরেক অভিভাবক রেশমা বেগম বলেন,‘এই এলাকায় আশেপাশে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ঝুকি নিয়েই স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। বাচ্চা যতক্ষন স্কুলে থাকে ততক্ষন নানা দুঃশ্চিন্তা মাথায় ঘোরে। অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।’
১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয় ২০১৩ সালে। বর্তমানে
বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৯১ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত
রয়েছে। তাদের পাঠদানের জন্য একজন প্রধান শিক্ষক ও চার জন সহকারী শিক্ষক রয়েছে।
বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান থাকার ফলে একটি ৫শতক একটি ছোট ভাড়া
যায়গায় পাঠদানের কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,‘বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ওই এলাকার সৈয়দ
নেজার আলী শাহ্ ফকির, আব্দুল মান্নান শাহ ফকির, ছুলেমান আলী শাহ্ ফকির ও আব্দুল
মজিদ শাহ্ ফকির ১৯৯৫ সালের ২১ জানুয়ারী বিদ্যালয়টি নামে ৩৩ শতক জমি লিখে দেন। সে
অনুযায়ী বিদ্যালয়ের নামে ৩৩শতক জমি রেজিষ্ট্রি হয়েছে এবং নামজারীও সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পর জমিদাতার উত্তরসূরী রমজান আলী শাহ্ ফকির
বিদ্যালয়ে জমি দিবে না বলে আদালতে মামলা করে। আদালতে মামলা চলার ফলে প্রায় তিন বছর
ধরে পুকুরের ধারে ৫ শতক ভাড়া জমিতে টিনের চালা দিয়ে ঝুকি নিয়ে পাঠ দান কার্যক্রম
চালাচ্ছে শিক্ষকেরা। মামলা থাকার ফলে জাতীয়করণের ১০বছর পরেও বিদ্যালয়ের ভবন
নির্মাণে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয় নি।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সাবিনা সুলতানা বলেন,‘বিদ্যালয়টিতে যাওয়া আসার রাস্তা
নেই। ঝুকি নিয়ে বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে আসে। বিদ্যালয়ে চারদিকে পুকুর থাকায়
আমরাও সব সময় দুঃশ্চিন্তায় থাকি। ছোট বাচ্চা খেলার ছলে পুকুরে পড়ে কখন কি দূর্ঘটনা
ঘটে বলা যায় না। একটি বাচ্চার কিছু হলে তার দ্বায়ভার কে নিবে? বিদ্যালয়ের জমি
দাতারা বিদ্যালয়ের নামে জমি দিয়ে আবার জমি ফেরত নেওয়ার জন্য আদালতে মামলা দিয়েছে।
মামলার ফলে তিন বছর ধরে ঝুকি নিয়ে বিদ্যালয়েল পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। কবে কি
হবে জানা নেই।’ জমির
মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে মামলার বাদী রমজান আলী শাহ্ ফকিরের সঙ্গে বাসায় গিয়ে ও ফোনে
যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন,‘ওই বিদ্যালয়টির এমন অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত ওই স্কুল পরিদর্শনে যাবো। বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কি মামলা চলছে। সে বিষয়ে জেনে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবো।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭