ইনসাইড থট

‘কুটনীতিকদের অবশ্যই ভিয়েনা কনভেনশনের দাড়ি-কমা মেনে চলতে হবে’


প্রকাশ: 13/11/2023


Thumbnail

আমি কোন কূটনীতিক নই। পেশায় একজন সাধারণ চক্ষু চিকিৎসক। তবে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ না হলেও সাধারণ জ্ঞান আমার আছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে চাই যে বর্তমানে বাংলাদেশে নিযুক্ত কিছু কিছু দেশের রাষ্ট্রদূতরা ভিয়েনা কনভেনশনের কথা পুরোপুরি ভুলে গেছেন। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কূটনীতিকদের সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ- যা প্রেরক দেশ কূটনীতিক মিশনের উপর ন্যস্ত করবে- তা গ্রাহক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা এ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হতে হবে। এছাড়া ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ-৪১.১ বলছে কূটনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও অনাক্রম্যতা উপভোগ করা সব ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে তাঁদের কর্মরত দেশের আইন ও প্রবিধানকে শ্রদ্ধা করা। এ ছাড়া কর্মরত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাও তাঁদের (কূটনীতিকদের) একটি দায়িত্ব। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা, প্রাধিকার ও অব্যাহতি (ইমিউনিটিজ) উপভোগ করা সম্পর্কিত নীতিগুলো অনুসরণ করলেও অন্যান্য নীতিগুলো তারা সঠিকভাবে মেনে চলছেন না। বাংলাদেশে নিযুক্ত কিছু কিছু রাষ্ট্রদূত নিয়মের তোয়াক্কা না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত না করেই বিভিন্ন মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করছেন। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের নির্বাচনসহ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘অতি উৎসাহ’ দেখানো পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের তলব করে কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। তারা হয়ত ভাবছেন চাইলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা যায়। চাইলেই তাদের সাথে নিয়ম অমান্য করে জোর খাটানো যায়। কিন্তু আমি তাদের একটি জিনিস বলতে চাই যে, এমন কোন কাজ করবেন না যাতে দেশের জনগণ বিরক্ত হয় এবং আপনার নিজের ও আপনাদের দেশের সম্মানহানি হয়।

আমাদের দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একদম সন্নিকটে। গণতান্ত্রিক দেশে হলেও একে দেশের কাঠামো অনুযায়ী নির্বাচনের নিয়মে কিছুটা পার্থক্য থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম ও কাঠামোর সাথে ভারতের নিয়ম ও কাঠামোর মিল থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এক দেশের নির্বাচন কাঠামো নিয়ে অন্য দেশের কোন কূটনীতিক নাক গলান না। কারণ এটি একটি দেশের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে অনেক দেশেই কোন রাজনৈতিক দল বা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি কূটনীতিকদের ভুল তথ্য দিয়ে এসব অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়। তাই এটি সবসময় কূটনীতিকদের দোষ না। কখনও কখনও এখানে রাজনীতির মার-প্যাঁচও থাকে। স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেকেই জল ঘোলা করার মিশনে নেমেছেন। যারা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিদেশি কূটনীতিকদের প্ররোচিত করছে তাদের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথা বলতে চায় যে, আপনারা ভুল পথে আছেন এবং একসময় আপনাদের খোঁড়া গর্তে আপনারাই পড়বেন।

এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত যেসব কূটনীতিক তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলব যে, দয়া করে আপনারা যে দেশে থাকবেন সেই দেশের নিয়মনীতি এবং সংস্কৃতি মেনে চলুন। একজন কূটনীতিক হিসেবে আপনাদের বাইবেল হচ্ছে ভিয়েনা কনভেনশন। যেটি আপনারা প্রায়ই অনাম্য করছেন। আপনারা সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না অথবা ভাবছেন বাংলাদেশকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়ার কিছু নেই। একটি জিনিস খুব ভাল করে মনে রাখবেন যে, বাংলাদেশ এখন আর সেই ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ এখন ২০২৩ সালের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে ছোট এবং গুরুত্বহীন ভাবার কোন সুযোগ নেই। আপনাদের কাছে তাই আমার অনুরোধ যে, কূটনীতিক শিষ্টাচারের বাইরে যেয়ে কোন কিছু করবেন না। তাহলেই আপনাদের সম্মান বাড়বে এবং আপনারা যেটা চান সেটাও আপনারা অর্জন করতে পারবে।

আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে। কূটনীতিকরাও বাংলাদেশে একটি সঠিক নির্বাচন দেখতে চায়। সঠিক নির্বাচন পেতে হলে সবাইকেই সঠিকভাবে নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। কূটনীতিকদেরও ভিয়েনা কনভেনশন দাড়ি কমা মেনেই চলতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭