ইনসাইড পলিটিক্স

তফসিলের পর কি করবে বিএনপি


প্রকাশ: 13/11/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে যে কোনো সময়। নির্বাচন কমিশন সূত্রগুলো বলছে, চলতি সপ্তাহেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আগামী বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে অনেকে বিবেচনা করছেন। এখন প্রশ্ন হল যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি কি করবে। 

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, বিএনপির নেতারা বলছেন, একতরফা ভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে স্বাভাবিক ভাবেই তারা এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকে জোরদার করবে। তবে বিএনপির মধ্যে ভিন্ন মতও পাওয়া গেছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, নির্বাচনের তফসিলের পর বিএনপি তিন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। 

১. অসহযোগ আন্দোলন: বিএনপির মধ্যে এই মতামতটি এখন সবচেয়ে বেশি প্রবল হচ্ছে যে যখনই তফসিল ঘোষণা করবে সাথে সাথে এই তফসিলের প্রতিবাদে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেবে এবং সেই অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সবকিছু অচল করে দেবে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে, জনগণকে খাজনা ও ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা যেখানে একটি রাজনৈতিক দল দুই দিনের অবরোধ ডেকে তা পালন করতে পারে না, সেখানে এ ধরনের অসহযোগ আন্দোলন করে কি লাভ হবে তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। এটি বিএনপির উচ্চাভিলাষী অবাস্তব চিন্তা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারপরও বিএনপির কোনো কোনো মহল এখনও এই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে বলে জানা যাচ্ছে। 

২. নির্বাচন পেছানোর দাবি: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নাটকীয় অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। নির্বাচন পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাতে পারে। তারা বলতে পারে যে, আমরা নির্বাচনে আসতে আগ্রহী কিন্তু এই তফসিলের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনে যেতে পারব না। এ কারণে তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাব এবং এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে এই তফসিল পেছানোর দাবি আসলে একটি রাজনৈতিক কৌশল। এর মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে তারা অনিশ্চিত করে তোলার একটা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করবে। তফসিল পিছিয়ে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেখান থেকে অসংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়, সেই চেষ্টা করবে বিএনপির।

২৯ জানুয়ারির মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে। এখন যদি নির্বাচন ২৩/২৪ জানুয়ারির দিকে বিএনপির কথায় পিছিয়ে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে আগে যদি বিএনপি বলে তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে না, এজন্য তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, তাহলে একটি সাংবিধানিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। বিএনপি সে রকম একটি সাংবিধানিক অচলাবস্থা তৈরির জন্য চেষ্টা করতে পারে। এজন্য নির্বাচনের তফসিলের পর পর তারা কৌশলগত কারণে অবস্থান পরিবর্তন করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারে। 

৩. আন্দোলন অব্যাহত রাখা: অসহযোগ আন্দোলনও নয়, তবে বিএনপি তফসিল ঘোষণার পর তাদের নিজেদের যে বর্তমান আন্দোলনের ধারা অর্থাৎ থেমে থেমে অবরোধ করা এই ধরনের কর্মসূচি তারা অব্যাহত রাখতে পারে। বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্যতা দিবে না এবং এই নির্বাচন বাতিলের জন্য তারা চাপ প্রয়োগ করবে। ফলে বিএনপি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। 

এই তিনটি কৌশলের মধ্যে কোন কৌশলটি শেষ পর্যন্ত বিএনপি গ্রহণ করবে সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তবে বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে বিএনপি আসলে তফসিল ঘোষণার পর কি করবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার ওপর। তারেক জিয়া যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭