ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদী সরকারপ্রধান যারা


প্রকাশ: 13/11/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেল ৩ মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে বিগত ১৫ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন। মোট ৪টি নির্বাচনে জয়ী হয়ে বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদী মহিলা প্রধানমন্ত্রী তিনিই। এছাড়া আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দীর্ঘ সময় ধরে একটি সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেখেছি। পূর্ণ গণতন্ত্রচর্চাকারী দেশেও এমন উদাহরণ রয়েছে। অনেক দেশে একজন ২ বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনা। আবার অনেক দেশে একজন প্রধানমন্ত্রী বা একটি সরকার বারবার নির্বাচিত হয়ে লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে।

আধুনিক গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয় যুক্তরাজ্যকে। যুক্তরাজ্যের একজন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। তিনি ১১ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৯ জন প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন । রবার্ট ওয়ালপোলই দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন চারটি পৃথক মেয়াদে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশেও দীর্ঘসময়ের জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন । এশিয়া ও পৃথিবীর প্রথম নারী সরকারপ্রধান ছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক। তিন মেয়াদে তিনি মোট ১৮ বছর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বামদল দীর্ঘদিনযাবৎ ক্ষমতায় ছিল। এ সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যতি বসু  ১৯৭৭-২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। 

পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলোতে দীর্ঘসময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের উদাহরণ রয়েছে। মালয়েশিয়ার উন্নতির কারিগর সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ যিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ৫ বার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে একটানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকেন তিনি। তার সময়ে মালয়েশিয়ার যথেষ্ট উন্নতি হয় এবং মালয়েশিয়া আর্থিকভাবে একটি  উন্নত দেশে পরিণত হয়। বর্তমানে মালয়েশিয়াকে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি সম্ভব হয়েছে একজন দক্ষ শাসক দ্বারা একটানা রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অন্যতম উন্নত, সফল ও সমৃদ্ধশালী দেশ সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের উন্নতির মহানায়ক বলা হয় লি কুয়ান ইউকে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করা লি কুয়ান টানা ৩০ বছর দেশ পরিচালনা করেন। এই তিন দশকে ভগ্ন অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে তুলে লি কুয়ান ইউ সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেন । সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সুবিধা বঞ্চিত একটি দেশ ছিল। এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদের কোনো আশীর্বাদ ছিল না দেশটিতে। 

এছাড়া আমরা কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ৩৮ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। এসময় কম্বোডিয় অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি সাধন করে। শিল্প, ব্যবসা আর কর্মসংস্থানের অমিত সম্ভাবনার দেশে পরিণত হয়েছে কম্বোডিয়া। ব্যবসা, বাণিজ্য, আমদানী ও রপ্তানী বাণিজ্যে দিনে দিনে এশিয়ার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দেশটি। আর এ সব সম্ভব হয়েছে একটি সরকারের পক্ষে একাধারে কাজ করে যাওয়ার ফলে। 

একটি সরকার একাটানা অনেকবছর ক্ষমতায় থাকলে সে দেশটিতে এর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। একটি সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করে। এসকল প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করার জন্য চাপ থাকে সরকারের ওপর। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তন হলে নতুন সরকার  বিগত সরকারের নেওয়া নানা প্রকল্প বন্ধ করে দেয়, ফলে তা আর আলোর মুখ দেখেনা। যা দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

এছাড়া প্রতিটি দলের দেশ পরিচালনা, উন্নয়ন কৌশল, অর্থনৈতিক পলিসি, পররাষ্ট্রনীতি, কূটনৈতিক সক্ষমতা ভিন্ন। প্রতিটা দলই তার নিজ নিয়মে দেশ পরিচালনা করে। সরকারের পরিবর্তনের ফলে দেশ পরিচালনার নিয়মনীতিতেও বারবার পরিবর্তন আসে যা একটি দেশের অগ্রযাত্রার জন্য বাধা।  তাছাড়া কোন দল নির্বাচনে জয়লাভ করলেও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে অদক্ষতার পরিচয় দেয়। ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলতা তৈরি হয়। 

অন্যদিকে একটি সরকার দীর্ধদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশে দুর্নীতি বাড়ে।  বিরোধীদলগুলোর উপর অত্যাচ্যার নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে। ফলে দেশের বিরোধীদলগুলো দুর্বল হয়ে যায়। সরকার একপাক্ষিকভাবে দেশ পরিচালনা করে। দেশের জন্য মন্দ সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে বাধা দেয়ার কেউ থাকেনা। দেশে দুর্নীতির মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে তাই বিরোধিদলের উপস্থিতি কাম্য। বাধাহীনভাবে দেশ পরিচালনা দেশ গণতান্ত্রিকভাবে ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একদল অনেকদিন ক্ষমতায় থাকলে সে দলটিই রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে একটি দলেরই নেতাকর্মী তৈরি হয় । একসময় ঘরে ঘরে নেতা তৈরি হয়ে জনগণের উপর কতৃত্বের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

তবে সকল বিবেচনায় একটি দক্ষ, শক্তিশালী, জনগণের সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল এবং ভিশনারী ও ক্যারিশমাটিক লিডারের নেতৃত্বে একটানা দেশ পরিচালনা করাই একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য আশীর্বাদ হবে।     




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭