ইনসাইড পলিটিক্স

এবার শর্তহীন সংলাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপ: আওয়ামী লীগের 'না'


প্রকাশ: 13/11/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন করেনি। বরং চাপ অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের কাছে এক চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিগুলোর মধ্যে একটি চিঠি আজ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

এই চিঠিতে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথমত, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের শর্তহীন সংলাপ চায়। তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি আরোপ করেছে তার কথা চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন অভিপ্রায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। 

অনেকেই মনে করছে এবার শর্তহীন সংলাপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগের মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাব রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের কোনো চিঠি পায়নি। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে আলাপ করে দেখা গেছে যে তারা এই ধরনের সংলাপের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক অবস্থানে অটল রয়েছে। 

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা ২৮ অক্টোবর যে কাণ্ড করেছে তারপর তাদের সাথে সংলাপের প্রশ্নই আসে না। এরকম কোন সংলাপে আওয়ামী লীগ যাবে না বলেও তারা জানিয়ে দিয়েছে। 

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এই চিঠির ব্যাপারে তারা তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং সংলাপের ব্যাপারে তাদের ইতিবাচক আগ্রহের কথা জানিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আর অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি কেউ পেয়েছেন কি না বা কে পেয়েছেন সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে একাধিক সূত্র বলছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এই চিঠি পেয়েছেন। তবে এই চিঠির ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শর্তহীন সংলাপের আগে বিএনপির যে সমস্ত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিশেষ করে তাদের যে মহাসচিব গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকে মুক্ত করা দরকার। নাহলে বিএনপি কাকে নিয়ে সংলাপে যাবে এই প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংলাপের আগ্রহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্রহের একটি বহিঃপ্রকাশ। শেষ পর্যন্ত যদি আওয়ামী লীগ সংলাপে না যায়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পারে বলেও কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। বিশেষ করে তিন দলের কাছে লেখা চিঠিতে যেখানে ভিসা নীতির কথা বলা হয়েছে, সেখানে সংলাপের জন্য আহ্বানকে একটি প্রচ্ছন্নভাবে একটি হুমকি বলেই মনে করা হচ্ছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করতে চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংলাপে এত আগ্রহী, তাহলে তাদের আগে বিএনপির সঙ্গে কথা বলা উচিত। বিএনপির জ্বালাও পোড়াও এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে আগে সরে আসতে হবে। না হলে এই সংলাপ কিভাবে হবে?

আওয়ামী লীগের অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সংলাপে কেন যোগ দিল না। সংলাপের ব্যাপারে তাদের অবস্থান কি এবং এই অবস্থান সুস্পষ্ট না করা ছাড়া আওয়ামী লীগ এই সংলাপের ব্যাপারে কোন উদ্যোগই গ্রহণ করবে না। 

আওয়ামী লীগের অন্য একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে। কাজেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপিকে সংলাপে যেতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনই ঠিক করবে কিভাবে নির্বাচন হবে। আর এই সমস্ত বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা রাজনীতিতে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিলের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকি নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭