ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় পার্টিকেও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা?


প্রকাশ: 13/11/2023


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে যে জি এম কাদেরকে দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং এই বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবে‌লি এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরতে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 

পিটার ডি হাস আজ বিকেলে জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে গিয়ে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। বৈঠকের পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছেন যে চিঠিতে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই চিঠি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকেও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবে‌লি। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করে এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত করে না।

প্রশ্ন হলো যে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে কি ধরনের আলাপ হয়েছে? যদিও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অনানুষ্ঠানিক আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি নতুন মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি যদি উপযুক্ত পরিবেশ ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তখন আওয়ামী লীগের একার পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এরকম একটি অবস্থান থেকে জাতীয় পার্টিকে কি নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো পরামর্শ কোন কোন মহল থেকে দেওয়া হচ্ছে। একাধিক রাজনৈতিক সূত্রে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টি এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে৷ তবে তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। 

জাতীয় পার্টি গত এক বছরের বেশি সময় ধরেই নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের আলো আঁধারি অবস্থানে রয়েছে। তাদের কোন কোন নেতা নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলছেন। আবার অনেকেই নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে জাতীয় পার্টি কী করবে—এ নিয়ে ক্রমশ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কিনা—এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন চলছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, যদি নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে শর্তহীন সংলাপ না হয় সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচনে না যায়—এমন একটি পরামর্শের কথা বলা হচ্ছে। এখন এই ধরনের অবস্থান যদি জাতীয় পার্টি গ্রহণ করে তাহলে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে এবং এটি সরকারের ওপরে চাপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে বলে কোন কোন মহল মনে করছেন৷ 

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার জন্য তাদের অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখবে। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসার কোন কারণ নেই বলে অনেকে মনে করেন। তবে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক চাপের ফলে জাতীয় পার্টি কি নির্বাচন থেকে সরে যাবে কি না, এটা নিয়েও কোন কোন মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৪ এর অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সেই সময় জাতীয় পার্টি তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অবশ্য পরবর্তীতে রওশন এরশাদের হস্তক্ষেপে জাতীয় পার্টি ভাঙাচোরা ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং যার ফলে ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবার ঘটনা ঘটে। এবারও জাতীয় পার্টি যদি সেরকম করে তাহলে সেরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং এবার যদি ২০১৪ এর মতো পরিস্থিতি ঘটে তাহলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তা নাও পেতে পারে। এরকম একটি অবস্থান থেকে কেউ কেউ জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭