ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় পার্টি কার ‘ট্রাম্পকার্ড’?


প্রকাশ: 14/11/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি হতে পারে ট্রাম্পকার্ড। তবে তারা কারা ট্রাম্পকার্ড হবে সেটা নিয়েই এখন গুঞ্জন এবং প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপিকে ছাড়াই একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে সরকার। কিন্তু অন্যদিকে জাতীয় পার্টি যদি কোনো কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া কষ্টকর হবে। এদিকে আজ সন্ধ্যার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে গিয়েছেন বলে বঙ্গবভন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বৈতরণী পার হতে পারবে কিনা তা অনেকখানি নির্ভর করছে জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি এখন পর্যন্ত তাদের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানায়নি। যদিও জাতীয় পার্টিতে এ নিয়ে সুস্পষ্ট ভাবে দুই ধরনের মতামত রয়েছে। জাতীয় পার্টির একটি অংশ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বলেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে এই অংশটিকে জাতীয় পার্টির মধ্যে সরকারপন্থী অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই অংশের নেতাদের পরিষ্কার অবস্থান আর যাই হোক তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করবে না। কারণ বিএনপি র সাবেক প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেন মহম্মদ এরশাদকে অন্যায় ভাবে জেলে রেখেছিলেন। আর এই অবস্থা যদি বিএনপি প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে অন্যায় ভাবে জেলে রেখেছিলেন। আর এই অবস্থান যদি জাতীয় পার্টি শেষপর্যন্ত বহাল রাখে তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ তখন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ, তৃণমূল বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন করতে পারবে। কিন্তু যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচন না করে তাহলে কি হবে? জাতীয় পার্টি নির্বাচন না করার শঙ্কা তৈরি হয়েছে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং তার অনুগত কিছু নেতার মনোভাবের কারণে। জিএম কাদের এখন পর্যন্ত বলে আসছেন যে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে কি করবে না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে গতকাল দলটির মহাসচিব বোবা মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। জাতীয় পার্টিও গতকাল ডোনাল্ড লু এর চিঠি পেয়েছেন এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আনুষ্ঠানিকভাবে এই চিঠি হস্তান্তর করেছেন। এই চিঠিতে যে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে, সেই সংলাপের সঙ্গে জাতীয় পার্টির একমত বলেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির মনোভাব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের সংশয় এবং অস্বস্তি রয়েছে। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত কি করে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানা হিসেব নিকেষ আছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন যে, শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসবে। আবার অন্যান্য বিভিন্ন মহল বলছে যে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির গোপন যোগাযোগ রয়েছে। জাতীয় পার্টি যদি শেষ পর্যন্ত দেখে যে সরকার বড় ধরনের চাপে রয়েছে, তাহলে তারা নির্বাচনের পর থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন যে জাতীয় পার্টি হয়তো সরকারের সাথে একটা গিভ এন্ড টেকে যাবে। নির্বাচনে গেলে তাদের কী লাভ হবে এবং নির্বাচনে না গেলে তাদের কি ক্ষতি হবে ইত্যাদি লাভ ক্ষতির হিসাব নিকেশ করে তারা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে জাতীয় পার্টি যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটির ওপর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, গতি, প্রকৃতি অনেকখানি নির্ভর করবে। সরকারও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইবে না। আর সে কারণেই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকার যা যা করা দরকার সবকিছুই করবে। তবে সুশীল সমাজের একটি অংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টিকে কোনো পথে পরিচালিত করতে চায় সেটিও একটি বিবেচনার বিষয়। কারণ তারা যদি মনে করে যে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারলেই তাদের জন্য নির্বাচিত সরকারকে আনা সহজ হবে তাহলে তারা সে পথেও যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। তবে ২০১৪ অভিজ্ঞতার কারণেই সরকার জাতীয় পার্টির ব্যাপারে অনেক বেশি সজাগ এবং এ কারণেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার আট ঘাট বেঁধে নামবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭