ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের কথা কেউ শুনছে না কেন?


প্রকাশ: 14/11/2023


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গতকাল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি ডোনাল্ড লু'র একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। একইসঙ্গে তিনি তিনটি রাজনৈতিক দলকে শর্তহীন সংলাপে বসার জন্য আবার তার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন। ওই দিনই মার্কিন দূতাবাস থেকে একই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য এবং ডোনাল্ড লু'র চিঠি হস্তান্তরের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সংলাপের কোনো আলামত নেই। বরং পিটার ডি হাস আওয়ামী লীগের কাউকে চিঠি হস্তান্তর করেছেন কিনা কিংবা বিএনপির কাউকে চিঠি হস্তান্তর করেছেন কিনা সে ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। না আওয়ামী লীগ বিএনপি না মার্কিন দূতাবাস এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দিয়েছে। তাহলে কি পিটার হাস বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন নাকি আওয়ামী লীগ-বিএনপি তার কাছ থেকে চিঠি গ্রহণের জন্য লুকোচুরি খেলছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয় কি বাংলাদেশে কেটে যেতে শুরু করেছে—এই প্রশ্নগুলোই এখন সামনে এসেছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার করে সংলাপের কথা বলার পরও আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কেউই সংলাপকে পাত্তা দিচ্ছে না। এমনকি ছোট ছোট রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় পার্টির মতো ডুবতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া কেউই সংলাপ নিয়ে কথা বলছে না। বরং আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুটি দলই তাদের অনড় অবস্থানে অটল রয়েছে। আওয়ামী লীগ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করছে, তারা সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে, সরকারকে কোণঠাসা করতে চায়, প্রধানমন্ত্রী একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়৷ ঠিক তেমনি ভাবে বিএনপিও এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

বিএনপি মনে করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যাক সুলিভানের বৈঠক, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে উজরা জেয়ার বৈঠকের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে। আর সর্বশেষ ভারতে টু প্লাস টু সম্মেলনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য চেষ্টা করছে। আর এই কারণেই বিএনপি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারা মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিএনপিকে এই সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বানে বিএনপি উল্লসিত নয়। বিএনপি তাদেরকে বিজয় মনে করছে না। বরং বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে তারা মনে করছেন যে অব্যাহত আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা সরকারকে চাপে ফেলতে চায় এবং কোণঠাসা করতে চায়। কিন্তু সেটি আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কোনো রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কোনো বক্তব্য না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা অন্য কোনো রাষ্ট্রদূত সম্বন্ধে কোনো রকম মন্তব্য করছেন না। আবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত আগে যেমন হরহামেশাই বিভিন্ন নেতাদেরকে ডাকলেই তারা ছুটে যেতেন পিটার হাসের বাসভবনে কিংবা অ্যামেরিকান ক্লাবে তেমন ঘটনাও ঘটছে না। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল খুব স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তাদের পরামর্শ এড়িয়ে একটা নির্বাচন করতে চায়। আর এই নির্বাচন করে ফেলার পরই নতুন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্নির্মাণের কাজ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই এখন মার্কিন আদেশ নির্দেশকে মোটামুটি উপেক্ষা করছে। তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভুত্বের দিন কি বাংলাদেশে শেষ হয়ে গেল? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বললে যখন বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খেত, সেই দিন কি তাহলে ফুরিয়ে এল?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭