প্রকাশ: 15/11/2023
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে
উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (এইচআরসি)। এছাড়া পরিস্থিতি
মোকাবেলায় সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা মানবাধিকার কাউন্সিলের পর্যালোচনাকে গ্রহণের আহ্বান
জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) এইচআরসির ওয়েবসাইটে
প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এই উদ্বেগ জানান
বিশেষজ্ঞরা।
মানবাধিকার কাউন্সিল বাংলাদেশের মানবাধিকার
পরিস্থিতির পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা সম্পন্ন করার পর দেওয়া এই বিবৃতিতে জাতিসংঘের
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ন্যায্য মজুরি দাবি করা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন-পীড়ন চালানো
হচ্ছে।
একইসঙ্গে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে
সরব রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের নেতাদের বিচারিক হয়রানি
করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনকারী আইন সংস্কারে ব্যর্থতা গুরুতর
উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যখন ২০২৪ সালের
শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন রাজনৈতিক সহিংসতার তীব্র বৃদ্ধি,
বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে নির্বিচারে আটক
করা, কর্তৃপক্ষের অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ এবং আন্দোলনে ব্যাঘাত ঘটাতে ইন্টারনেট বন্ধ
করার মতো ঘটনার কারণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এছাড়া প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে
পরিবারের সদস্যদের হয়রানি, ভয় দেখানো এবং বেআইনিভাবে আটক রাখার অভিযোগও সামনে এসেছে।’
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর
হুমকি রয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে এইচআরসি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা
হয়েছে, গত কয়েক বছরে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, নজরদারি, ভয় দেখানো এবং
বিচারিক হয়রানির কারণে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক স্ব-সেন্সরশিপ হয়েছে।
সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের
নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (এইচআরসি)। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগকে
অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের এমন ঘটনা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে এবং একইসঙ্গে
মৌলিক মানবাধিকারকেও ক্ষুণ্ন করে।’
বাংলাদেশে বিচারিক হয়রানির উদাহরণ হিসেবে
জাতিসংঘের এই কাউন্সিলের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের
মামলার বিষয়েটি সামনে তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, দুই বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে, বারবার শুনানি
করে এবং দেশের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। কিন্তু
এরপরও প্রসিকিউশন রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানসহ
বিভিন্ন ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের বারবার আদালতে যেতে হয়েছে এবং সাজা হয়েছে।
এখনও আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। অধিকারকে গত বছর তার নিবন্ধন নবায়ন করা থেকেও
বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ
ইউনূসের মতো নাগরিক সমাজের নেতা বা আদিলুর রহমান খান বা নাসিরুদ্দিন এলানের মতো মানবাধিকার
কর্মীদের অভিযুক্ত বা দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তখন এটি সকল সাংবাদিক এবং মানবাধিকার
কর্মীদের কাছে একটি বার্তা পাঠায়। আর তা হচ্ছে- ব্যক্তি যতই বিশিষ্ট হোক না কেন ভিন্নমত
বা সমালোচনার কারণে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, ‘কর্তৃপক্ষের মতে, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং সম্পাদকসহ বহু মানুষের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত ৫ হাজার ৬০০ টিরও বেশি মামলা এখনও বহুল সমালোচিত কঠোর ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্টের অধীনে বিচারাধীন রয়েছে।’
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭