ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সুষ্ঠু নির্বাচন কি আদৌ সম্ভব?


প্রকাশ: 16/11/2023


Thumbnail

বিশ্বের বুকে সুপার পাওয়ার রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক জটিল। অন্যান্য দেশের মত এদেশের নির্বাচন পরিচালিত হয় না। গণতন্ত্রের ধারক বাহক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করলেও খোদ নিজ দেশের নির্বাচন নিয়েই দেশটিতে রয়েছে নানা বিতর্কঅতীতে চোখ রাখলে দেখা যায়, প্রায় আড়াইশো বছরের মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিতর্কিত নির্বাচন নতুন কোনো ঘটনা নয় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এপর্যন্ত বেশ কয়েকটি বিতর্কিত এবং নাটকীয় ঘটনা আছে যুক্তরাষ্ট্রের মত অন্যান্য দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের আওয়াজ তুলে প্রায় প্রত্যেক দেশেই নির্বাচন নিয়ে হয় গণ্ডগোল, কোথাও এর পরিমাণ বেশি আর কোথাও কম। নির্বাচন এমনভাবেই সংঘটিত হয়ে আসছে। তাই, হয়তো বিশ্বব্যাপী সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরালে বিতর্কিত নির্বাচন বা নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক একটি সাধারণ ঘটনা।


আমেরিকার সর্বশেষ বিতর্কিত নির্বাচন ও জনগণের ভাষ্য:

সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন-ট্রাম্প হয়েছিলেন মুখোমুখি। তাদের ঐ নির্বাচন নিয়ে বিরোধসংঘাত, ঝুটঝামেলা কম হয়নি যার রেশ আজ পর্যন্ত চলমান। সম্প্রতি ফক্স নিউজে প্রকাশিত এক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ (৫৬% রিপাবলিকান) প্রাপ্তবয়স্করা বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্রের ৩ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবৈধ ভোটদানের দ্বারা কলঙ্কিত হয়েছিল। বেশিরভাগ রিপাবলিকানই এখনও বিশ্বাস করেন ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পই জয়ী হয়েছেন এবং অবৈধ ভোটদানের মাধ্যমে তাকে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হতে হয়েছে।

এছাড়া রয়টার্স এর এক জরিপে দেখা গেছে ৬১% রিপাবলিকানের মতে, ২০২০ সালের নির্বাচনটি ট্রাম্পের কাছ থেকে "চুরি" করা হয়েছে। ৫৩% রিপাবলিকান ট্রাম্পকেই সত্যিকারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখেন। ফক্স নিউজের জরিপে এটিও উঠে এসেছে যে বেশিরভাগ রিপাবলিকান (৭৫%) মনে করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্তমানে যত মামলা চলমান তার বেশিরভাগের উদ্দ্যেশ্যই রাজনৈতিক।

অপরদিকে মাত্র ২৯% রিপাবলিকান বিশ্বাস করেন যে ইউএস ক্যাপিটলে তার সমর্থকদের দ্বারা ৬ জানুয়ারী যে মারাত্মক দাঙ্গা হয়েছিল ট্রাম্পের তার জন্য কিছু দোষ ভাগ করে নেয়া উচিত।

এদিকে সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের জয়লাভের পর একের পর এক মামলায় জড়িয়েই যাচ্ছেন ট্রাম্প। সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রায় ৭৮টি গুরুতর অভিযোগ বর্তমান। 'ফলাফল বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা', বিদ্রোহকে প্ররোচিত-সহযোগিতা করা, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণার ষড়যন্ত্র, দাপ্তরিক কাজে বাধা দেয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আর এ সকল অভিযোগের বরাবরই বিরোধিতা করে আসছেন ট্রাম্প। বারবারই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে তিনি উল্টো জো বাইডেনের ওপর দোষ চাপিয়েছেন ট্রাম্পের দাবি,  বাইডেন প্রশাসন চক্রান্ত করে তাকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরাতে চাইছেএখন অবধি এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি। আদালতে ট্রাম্পের হাজিরা দেয়া যেন নিয়মিত ঘটনা।

অর্থাৎ, যেকোনো দেশেই নির্বাচন নিয়ে সরকারদলীয় এবং বিরোধীদলীয় ব্যক্তিবর্গের এসব টানাপোড়েন, কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি সাধারণ ঘটনা। একটি দেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি এমনটা শোনা একপ্রকার অভূতপূর্ব বিষয়সুষ্ঠু নির্বাচন শব্দটা মূলত কানে শুনতেই আরাম, নির্বাচন প্রেক্ষাপটে বাস্তবের সাথে আদতে এর মিল থাকে বহুদূর। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে যখন এত টানাপোড়েন, কারচুপির অভিযোগ, তখন তারাই যদি আবার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং ঝামেলাবিহীন নির্বাচনের ভাষণ শোনান তখন সেটা হাস্যকরই শোনায়।


ব্রেক্সিট বিতর্ক:

আন্তর্জাতিক মহলে ব্রেক্সিট নিয়েও কম বিতর্ক নেই। ইউরোপের দেশ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাজ্য। ইইউ বেরিয়ে যাওয়া বা এক্সিটের সেই আলোচিত ঘটনার নাম ব্রেক্সিট। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ভোটাভুটি করেছিল ব্রিটিশরা। ৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩ জুন একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন। ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে, আর থাকার পক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের ফলাফল এবং বাস্তবতা হিসাব করে এখন স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে একাকী যুক্তরাজ্যকে। ফলে ব্রেক্সিটকে ‘ভুল’ হিসেবে দেখছে ব্রিটিশরা। এই নির্বাচনও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিভিন্ন দেশের প্রত্যেকটি নির্বাচন ঘিরেই টুকটাক প্রশ্ন ওঠে। সুষ্ঠু নির্বাচন দাবির ধ্বনিতে প্রতিটা দেশ মুখরিত থাকলেও একটি দেশের নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটা শোনা যায়নি। বরং নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক, কারচুপি, ফলাফল মেনে না নেয়ার যে অঘোষিত এক রীতি রয়েছে সেটাই বহু বছর ধরে প্রায় সকল দেশ অনুসরণ করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর ব্যতিক্রম না হয়েও অন্যান্য অনেক দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। অন্য দেশের নির্বাচনের মত অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নিজ দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারা দেশটির অন্য দেশের নির্বাচনের বিষয়ে এমন দখলদারী আচরণ কতটা গ্রহণযোগ্য?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭