ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লির কথাই শুনল ওয়াশিংটন?


প্রকাশ: 16/11/2023


Thumbnail

আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপর ছিল। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে ডোনাল্ড লু তিনটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল। ফলে অনেকেই মনে করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের চাপ অব্যাহত রাখবে। বিশেষ করে বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেজন্য তারা সরকারকে চাপ দেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের যে অবস্থান সেই অবস্থানে অটল রয়েছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর দেখা গেল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কোন কথাবার্তা বলছে না। বরং তারা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল গ্রহণ করেছে। আর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। 

কূটনৈতিক মহল মনে করছে, গত ১০ নভেম্বর দিল্লিতে জয়শঙ্কর এবং অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকের সূত্র ধরেই কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টে গেল? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এখন বাংলাদেশ ইস্যুতে দিল্লির পদাঙ্ক অনুসরণ করবে? দিল্লি যা বলবে, সেটাই কি মেনে নেবে?

গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে। ভারত যেখানে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, সংবিধান সমুন্নত রাখা এবং বর্তমান সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ এবং নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা ছিল ঠিক তার উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছিল যে বর্তমান সরকার ঠিকমতো চলছে না। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে না। মানবাধিকার বিষয়ে তাদের অনেক বক্তব্য ছিল। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোধহয় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান নিয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে যে তারা কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বরং তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ দেখতে চায়। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। কিন্তু তাদের অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আকুতি অনেকটাই ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অবস্থান বলে অনেকের কাছে চিত্রিত হচ্ছিল। বিশেষ করে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা জানাচ্ছিল, তখন অনেকেই মনে করছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোধহয় এই সরকারকে চায় না। বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তাদের অপছন্দের সরকারকে ক্ষমতা থেকে নানা কৌশলে হটিয়ে দেয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমন একটি ঘটনা ঘটবে। কিন্তু এ সব চাপ সহ্য করেই সরকার একটা নির্বাচনের কঠিন সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করে। এই নির্বাচনের সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি।

অনেক কূটনীতিক বিশ্লেষক মনে করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায়। তারা রাজনীতির গতি প্রবাহ কোনদিকে যায় সেটি দেখতে চায়, নির্বাচন কিভাবে হয় সেটি দেখতে চায়। যা করার তারা নির্বাচনের পরবর্তীতে করবে। আর অন্য একটি কূটনৈতিক মহল মনে করছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে কথাগুলো বলেছিল শুধুমাত্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে এই অঞ্চলে ভারতের বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না এবং এমন কোন পদক্ষেপ নেবে না যাতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নীরবতা পালন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পাল্টেছে কিনা বা এই নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান কি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব জানতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭