লিভিং ইনসাইড

বিশ্বের ৬ মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/03/2018


Thumbnail

আমরা বাস করি পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়। কারণ গোটা দুনিয়া চলেই পুরুষকে প্রাধান্য দিয়ে। নারীর জাগরণ অল্পবিস্তর শুরু হলেও মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার তেমন অগ্রগতি নেই এখনো। তবে মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা মাথা উঁচু করে নিজেদের শাসনতন্ত্র পুরুষদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কথাটির অর্থ হলো পরিবার, রাজ্য অথবা একটি গ্রুপ যেটি সম্পূর্ণভাবে মহিলা শাসিত অর্থাৎ পরিবারের কর্তৃত্ব একজন মহিলার হাতে থাকে, সেই পরিবারকেই মাতৃতান্ত্রিক পরিবার হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

এই সমাজ ব্যবস্থায় সমস্ত সম্পত্তি বংশানুক্রমিকভাবে মহিলাদের মধ্যেই হস্তান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে কোনো একজন সন্তান তাঁর মায়ের থেকে যাবতীয় সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে। সমাজে এখনো টিকে আছে এমন কিছু সমাজব্যবস্থা। এমন কতকগুলি সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আজ আমরা জানবো-

মোসুও



তিব্বতের সীমানায় বসবাসকারী ইউনান এবং সিচুয়ান প্রদেশের কাছে মোসুওরা সম্ভবত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত। চীনের সরকার সরকারিভাবে এই জাতিটিকে সংখ্যালঘু এবং নাক্সি নামে ঘোষণা করে। তবে এই নাক্সিদের থেকে মোসুওরা সংস্কৃতি এবং ভাষাগত দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি পরিবার এখানে নিজস্ব বাড়ীতে বসবাস করে এবং প্রত্যেকটি পরিবারের প্রধান এখানে একজন মহিলা। বংশানুক্রমিকভাবে এই মহিলারাই পরিবারের প্রধান এবং সম্পত্তি ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হিসাবে সেই মহিলাদের বংশধরদের ওপর হস্তান্তরিত হয়। মোসুয়া মহিলারা ব্যবসায় এবং রাজনীতির সব সিদ্ধান্ত নেন। বাচ্চারা মায়ের কাছে বড় হয় এবং মায়ের নাম গ্রহণ করে। এখানে কোনো রকম বৈবাহিক প্রতিষ্ঠান নেই । মহিলারা তাদের পছন্দ মত যেকোনো পুরুষকে গ্রহণ করতে পারেন এবং দম্পতিরা একত্রে বসবাস করেন না। যেহেতু সকল বাচ্চারা মায়ের যত্নে বেড়ে ওঠে সেহেতু বাবাদের কোন ভূমিকা থাকে না। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিতৃ পরিচয় জানা যায় না।

মিনাঙকাবাউ



ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রার প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের জনবসতিপূর্ণ মিনাঙকাবাউ আজকের পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার উদাহরণ। স্থানীয় আদিবাসী আইন অনুসারে সম্পত্তি মায়ের তরফ থেকে মেয়ের কাছে যায়। এই মিনাঙকাবাউ সমাজব্যবস্থায় মনে করা হয়, মা হলেন সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই সমাজ ব্যবস্থায় মহিলারা প্রধানত ঘরের সব ব্যাপারে আধিপত্য বিস্তার করেন আর পুরুষরা রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক দিকে আধিপত্য বিস্তার করেন। মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই ক্ষমতার বিচ্ছেদকরণে বিশ্বাস করে এবং প্রত্যেকেই সমান ক্ষমতা ভোগ করে। বিবাহের সময় প্রত্যেক মহিলা তার নিজের ঘুমোবার জায়গাটি স্থির করেন।

প্রত্যেক পুরুষ স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর সাথে রাত্রিবাস করে কিন্তু সকালবেলায় প্রাতঃরাশের জন্য তার মায়ের বাড়িতে ফিরে যায়। দশ বছর বয়সে প্রত্যেকটি ছেলে তার মায়ের গৃহত্যাগ করে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারে গিয়ে বসবাস করে এবং সেখানে হাতে কলমে বিভিন্ন কাজকর্ম এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শিক্ষা করে। এক্ষেত্রে উপজাতির প্রধান একজন পুরুষ হলেও একজন মহিলাই কিন্তু এই প্রধান কে নির্বাচন করে এবং প্রয়োজনে তাকে সেই পদ থেকে সরিয়েও দিতে পারে।

আকান



ঘানাতে এই আকান জনজাতির লোকজন সংখ্যাধিক্য নিয়ে বসবাস করে। আকামের সামাজিক সংগঠনগুলি মূলত মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যেখানে সবকিছু নির্ধারিত হয় মাতৃতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে। সকল মাতৃতান্ত্রিক প্রধানরাই এখানে সমাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আর পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে সমাজের কিছু লিডারশীপ ভূমিকা গ্রহণ করে।
এখানে বংশানুক্রমিক কথাটির অর্থ হলো সবটাই মাতৃতান্ত্রিক। অনেক সময় একজন পুরুষ তার নিজের পরিবারকে কোনো ব্যাপারে সমর্থন না করলেও একজন মহিলা আত্মীয় তার নিজের পরিবারকে সমর্থন করেন।

ব্রিব্রি



এটি হল একটি ক্ষুদ্র স্থানীয় এবং দেশীয় জনজাতি যাদের জনসংখ্যা মাত্র ১৩ হাজার। এদের বসবাস কোস্টারিকার লাইমন প্রদেশের তালামাঙ্কা ক্যান্টনে। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মত এরাও গোষ্ঠীবদ্ধ অবস্থায় বসবাস করে এবং প্রত্যেকটি গোষ্ঠী বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত। প্রতিটি পরিবার এবং গোষ্ঠীর প্রধান একজন মা অথবা মহিলা। মহিলারা এখানে একমাত্র যারা ঐতিহ্যগতভাবে এবং বংশানুক্রমিকভাবে সম্পত্তি ও জমির মালিকানা ভোগ করেন। এখানকার ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে কোকো প্রস্তুত ও ব্যবহার করা হয় তার প্রস্তুতিও মহিলারাই করেন।

গারো



তিব্বতী- বার্মা ভাষায় কথা বলা গারো জনজাতির লোকজন সব সম্পত্তি এবং রাজনীতির সমস্ত ব্যাপারে বংশানুক্রমিকভাবে ‘মায়ের থেকে মেয়ে’- রীতিতে চলে। সমাজব্যবস্থার সবই মাতৃত্বপ্রধান, যদিও সমাজে সম্পত্তির সংরক্ষণ পুরুষরাই করে।

এদের সম্পত্তি বংশানুক্রমিকভাবে মায়ের থেকে মেয়ের তরফে যায়। সাধারনত সকল সম্পত্তি মায়ের তরফ থেকে মেয়ের দিকে গেলেও যে সকল মেয়েরা মায়ের সম্পত্তি পায় না তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেক বেশি জটিল হয়ে দাঁড়ায়। বিয়ের পরে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর গৃহে বসবাস করে। বিয়ে করলেও সারাজীবন একসঙ্গে থাকা বাধ্যতামূলক নয়।

নাগোভিসি



নিউ গিনির পশ্চিমে অবস্থিত দক্ষিণ বোগেনভিল নামের একটি দ্বীপে নাগোভিসিদের বসবাস। এদের সমাজব্যবস্থা প্রধানত মাতৃতান্ত্রিক এবং দুই ভাগে বিভক্ত। জনগোষ্ঠী এখানে দুটি অংশে বিভক্ত থাকে। নাগোভিসি মহিলারা লিডারশীপ এবং উৎসবের সমস্ত ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে জড়িত থাকে। সম্পত্তি বা জমির মালিকানা বংশানুক্রমিকভাবে হস্তান্তরিত হয় মহিলা ভিত্তিকভাবে। নাগোভিসি মহিলারা বাগান বা কৃষির মতই যৌনতাকেও সমান প্রাধান্য দেয়। বিবাহ এখানে সংগঠিত নয়।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭