ইনসাইড বাংলাদেশ

পিটার হাসের মিশন কি শেষ হয়ে গেল?


প্রকাশ: 16/11/2023


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত দু বছর অত্যন্ত সরব এবং সচল ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাকে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। এমনকি কোন কোন সময় তাকে মনে হয়েছে তিনি বোধহয় সরকারের বিরুদ্ধে একজন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। যদিও পিটার হাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলেছে যে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা দেখতে চায়। তারা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বিপক্ষে নয়। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর থেকেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আচরণ অনেকটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

কূটনৈতিক মহলের কেউ কেউ মনে করেন যে, পিটার হাস বহু আগে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছিলেন। আজ দুপুর ১২ টায় তিনি কলম্বোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। যদিও তিনি কোথায় যাচ্ছেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে পিটার হাস কোথায় গিয়েছেন, তা তারা জানেন। কিন্তু সেই তথ্য তারা প্রকাশ করবেন না। বাংলাদেশে অবস্থানরত একজন ডিপ্লোমেট যদি বিদেশে যান তাহলে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যান এবং এরকম তথ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আছে। তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী এ তথ্য তারা প্রকাশ করবেন না।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এই তথ্য দূতাবাস থেকে সংগ্রহ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। মার্কিন দূতাবাস এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি প্রদান করেনি। গতকাল পর্যন্ত পিটার হাসকে বাংলাদেশ নিয়ে অত্যন্ত সরব দেখা গিয়েছিল। গতকাল সকালে তিনি সচিবালয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি মর্কিন দক্ষিণ মধ্য এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়মন্ত্রী ডোনাল্ড লু এর এক চিঠি হস্তান্তর করেন। এই চিঠি হস্তান্তরের তিন দিন আগে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে শর্তহীন সংলাপ সংক্রান্ত ডোনাল্ড লু'র চিঠি হস্তান্তর করেন। 

২৮ অক্টোবরের বিএনপির তাণ্ডব নাশকতার পর থেকেই অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত। এরপর থেকে তিনি শর্তহীন সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর আগে বিভিন্ন সময় তাকে কখনও আওয়ামী লীগের অফিসে কখনও বিএনপি নেতাদেরকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে তার বাসভবনে বৈঠক করতে দেখা গেছে। এমনকি যখন মে মাসে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখনও তিনি দুই দলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে তিনি বিস্তারিত কথা বলেছিলেন। অনেক সময় পিটার হাসের ভূমিকা একজন রাষ্ট্রদূতের মতো ছিল না। মনে হচ্ছিল তিনি একটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসেছেন। 

অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলাও হয়েছিল যে পিটার হাসের মিশন হল বাংলাদেশের একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন তার বিদেশে চলে যাওয়া এবং যাওয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে না দেওয়া নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন তাহলে কি তিনি রণে ভঙ্গ দিলেন? পিটার হাসের মিশন কি শেষ হয়ে গেল? সরকার নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর এটি অনুধাবন করেই কি পিটার হাস চলে গেলেন? 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি তেমন নয়, একজন রাষ্ট্রদূত যেকোনো প্রয়োজনে বা ছুটিতেও অন্য দেশে যেতে পারেন। এটি তার নিজস্ব বিষয়। আর পিটার হাস বাংলাদেশে যে তৎপরতা গুলো চালিয়ে চালিয়েছেন, সেটি কোনোভাবেই ব্যক্তিগত বিষয় ছিল না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশেই তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বাড়াবাড়ি করেছেন কিনা বা সীমার বাইরে গিয়েছেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে পিটার হাসের মিশন এখনও শেষ হয়নি। নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনের আগে অনেক কিছুই ঘটতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭