ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে গণ পদত্যাগের হিড়িক


প্রকাশ: 16/11/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বিএনপিতে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপিতে একদিকে চলছে বহিষ্কার, অন্যদিকে চলছে গণ পদত্যাগের হিড়িক। মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতারা যারা স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়, তাদেরকে হয় বহিষ্কার করা হচ্ছে অথবা তারা নিজেরাই পদত্যাগ করছেন। এর কারণ হল নির্বাচনঃ বিএনপি একটি বড় অংশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। এরা কেউ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে, কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। আর এ কারণেই তারা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছে। 

গত তিনদিনে বিএনপিতে দেড় শতাধিক বিভিন্ন স্তরের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা সকলেই নির্বাচন প্রক্রিয়া করতে চান বা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হতে আগ্রহী বলে বিএনপির হাই কমান্ড মনে করছে এবং এই কারণে তাদের আচার আচরণ বা বিএনপির ভাষায় সংগঠন বিরোধী তৎপরতার কারণে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন তাদের একজন অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব বলেছেন যে বিএনপিতে কোনো নিয়ম নাই, কোন গঠনতন্ত্র নাই, স্থায়ী কমিটির অনুমোদন ছাড়া এই ধরনের বহিষ্কার করা হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় বিএনপি একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। যে দলটি ন্যূনতম গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা করে না। 

আহসান হাবিব এর মত একই বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির অন্যান্য নেতারাও। তারাও বলছেন যেভাবে বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে তা অবর্ণনীয় এবং অকল্পনীয়। একটি রাজনৈতিক দল একজন ব্যক্তির নির্দেশে গঠনতন্ত্র, নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে সব কিছু করতে পারে না। অথচ বিএনপিতে এটাই হচ্ছে। তবে যারা বহিষ্কৃত হননি, তারা গণ পদত্যাগ করছেন। গত তিনদিনে দেড় শতাধিক ব্যক্তি যেমন বহিষ্কৃত হয়েছেন, ঠিক তার চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ বিএনপি নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করেছেন। এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন, কেউ কেউ তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন, কেউ কেউ কোথাও যোগ না দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তারা হয়ত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। 

বিএনপির যারা পদত্যাগ করছেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন তাদেরকে টার্গেট করেছে তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূল বিএনপি হঠাৎ করে ব্যস্ত সরব হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যারা বিএনপির জনপ্রিয় নেতা আছেন, তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। তৃনমূল বিএনপির অন্যতম নেতা তৈমুর আলম খন্দকার স্বীকার করেছেন যে তিনি বিএনপির অন্তত ৫০ জন বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি এটিও বলেছেন যে কোন কোন নেতা দেশে তার সঙ্গে বৈঠক করতে চায়নি। এ জন্য বিদেশে গিয়েও তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তৈমুর আলম খন্দকার আশা করছেন যে আগামী নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি তিনশ আসনে মনোনয়ন দেবেন এবং এই মনোনয়নে চমক থাকবে। বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও তৃণমূল বিএনপির থেকে মনোনয়ন নিতে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে তারা ভালো করবেন বলেও আশা করছেন। 

বিএনপি এখন আন্দোলন করবে নাকি দল থেকে গণ পদত্যাগ ঠেকাবে, দলের ভাঙন ঠেকাতে তা নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছে। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে সরকার বিএনপিকে ভাঙার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে এবং এই কারণেই বিএনপিতে গণপদত্যাগ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এসব ঘটনায় সরকারের মোটেও কোন ভূমিকা নেই। বরং বিএনপির অনেক নেতারা মনে করছেন যে, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে দলটি নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং এ রকম একটি রাজনৈতিক দলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই আসলে তারেকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। তারেকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তারা মনে করছেন যে এই দলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল। 

অনেক বিএনপি নেতা যারা পদত্যাগ করেছেন, তারা বলছেন যে বিএনপিতে যারা আছেন তারা চাকর বাকর হয়ে আছেন। তারেক জিয়ার সঙ্গে আর যাই হোক রাজনীতি করা যায় না। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির কতজন দলত্যাগ করবেন এবং  কতজন বহিষ্কৃত হবেন তার হিসেব সম্পর্কে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন যে দলত্যাগ হতে পারে, দল থেকে বহিষ্কৃত হতে পারে কিন্তু বিএনপি ভাঙবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭