ইনসাইড গ্রাউন্ড

ক্রিকেটের মাঠে সবচেয়ে বেশিবার কাঁদা দলটি বোধহয় দ.আফ্রিকাই!


প্রকাশ: 17/11/2023


Thumbnail

প্রজন্মের পর প্রজন্ম চোকার্স তকমা বয়ে নিয়ে বেড়াবে দক্ষিণ আফ্রিকা? কেন এমনটা হচ্ছে? বিশ্ব ক্রিকেটের বড় কোনও আসরে তারা ভালো শুরু করে। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত কি এক দাপুটে খেলা প্রোটিয়াদের! তাদের ক্ল্যাসিক ব্যাটিং-বোলিং যেন পটে আঁকা ছবির মতো নান্দনিক। পুরো পারফর্মেন্স যেন হট কেকের মতো। এরপর! দূর্দান্ত প্রতাপে সেমিতে গিয়েই এই দলটিকে বিচ্ছিন্ন, অচেনা মনে হয়। নীরবেই ছিটকে পড়ে যায় আসর থেকে। যেন এক বীর দলের নীরব প্রস্থান। আহা!

এবারের ভারত বিশ্বকাপেও সেই চিত্র চোখে পড়লো। কি এক প্রতাপশালী, অভিজাত শুরু দলটির। অথচ, এক রাতেই জমিদারী খুইয়ে, শাসনের ভার প্রতিপক্ষকে অর্পণ করে সাধারণ প্রজা হয়ে হেঁটে চলে যায় দূর দেশে। 

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যুগের পর যুগ তাদের সঙ্গী হলো আক্ষেপ। নামী-দামি ব্যাটার,  বোলার, বাঘা বাঘা অলরাউন্ডারে বেষ্টিত একটি দল হওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার ললাটে জোটেনি বিশ্বকাপ ফাইনাল। হোক সেটা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটাই আবার গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে নেদারল্যান্ডসের মতো পুচকে দলের কাছে হেরে। বড় ম্যাচে স্নায়ূ চাপের নিয়ন্ত্রণ বড়ই দরকার। 

গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসরেও নেদারল্যান্ডসের কছে হেরে সেমিতে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের সেমিতে উঠতে কেবল নেদারল্যান্ডসের সাথে জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত ছিল। কিন্তু, ওই চাপটিই তারা নিতে পারেনি। গার্ডিয়ানের ক্রিকেট বিশ্লেষক স্যাম প্যারির মতে, এটা একটা ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে যাওয়া মানসিক আঘাত’। আসলেই তাই। প্রোটিয়া ক্রিকেটাররা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মই যেন এই আঘাতটাই বহন করছে। 

বড় ম্যাচ বা মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের চাপ নিতে পারে না প্রোটিয়ারা। স্নায়ূ দূর্বল হলেই কেবল এমনটি হয়। আর এজন্যই তাদের ‘চোকার্স’ বলা হয়। ক্রিকেটে এই চোকার্স তকমা ৩১ বছরেও ঘুঁচাতে পারলো না দক্ষিণ আফ্রিকা। 

তার প্রমাণ এর আগের চারটি একদিনের বিশ্বকাপ। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিতে এসে দিক খুঁজে না পাওয়া আফ্রিকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালে একই ঘটনা ঘটলো। এ যেন এক দিক হারা নাবিকের জাহাজ। কোনবারই ফাইনালের সন্ধান পায়নি তারা। আর দুঃখের বিষয় হলো এর মধ্যে দুইবারই হেরেছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবার তৃতীয়বারের মতো অজিদের মোকাবেলা করলো সেমিফাইনালে। ফলাফল ফাইনালের স্বাদ অধরা রেখেই হেরে বিদায় নিতে হলো। 

১৯৯৯ বিশ্বকাপে এজবাস্টনে নাটকীয়ভাবে অস্ট্রেলিার কাছে পরাজিত ম্যাচটি এখনো প্রোটিয়াদের কাছে দগদগে ঘায়ের মতো। ম্যাচটি টাই হলেও গ্রুপ পর্বে এগিয়ে থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। 

২০১৫ সালে সেন্ট লুসিয়ায় মাত্র ১৪৯ রানে গুটিয়ে যাবার পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত হয়ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে ৯টি ম্যাচের সাতটিতেই জিতে দূর্দান্ত দাপটের সঙ্গে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়া ছাড়াও এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই রানের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল ডি কক-বাভুমারা।

সর্বশেষ চার মোকাবেলায় প্রতিটিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ী হয়েছে প্রোটিয়ারা। এর মধ্যে ৪ সপ্তাহ আগে লক্ষ্ণৌতে গ্রুপ পর্বে ১৩৪ রানে জয়ী হবার ম্যাচটিও রয়েছে। অথচ, আগের ম্যাচে জিতে সেমির সাক্ষাতে পরাজিত হতে হলো। 

নেওয়া হলো না ফাইনালের স্বাদ। এবারও কাঁদতে কাঁদতে বিদায়! ক্রিকেটে বোধহয় এমন আফসোসে বেশিবার কাঁদা দলটির নামও বোধহয় নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। কি জানি! এই কান্না একদিন স্পৃহা হয়েও ফিরে আসতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭