প্রকাশ: 17/11/2023
কানাডার বৈধ ভিসা নিয়ে সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার নাম করে সিলেট থেকে
কানাডার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ৪২ জন যাত্রী। কানাডা গমনের কারণ হিসেবে বিয়ের
অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথাই জানিয়েছিলেন। দেশে ফেরার নিশ্চয়তা হিসেবে তাদের কাছে ছিল
ফিরতি ফ্লাইটের টিকেটও। সিলেট থেকে তারা বিমানে করেই আসেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে। কিন্তু ঢাকায় আসার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান
বাংলাদেশ এয়ারলাইনের কর্মীরা তাদের বোর্ডিং না দিয়ে কানাডা যাত্রা আটকে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিলেট ও কানাডায় সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা
চলছে।
জানা গেছে, কানাডা
যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১০ নভেম্বর সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন
সম্পন্ন করেন ওই ৪২ যাত্রী। শাহজালালে বিমানের চেক ইন কাউন্টারের কর্মীরা দেখতে পান,
ওই ৪২ জন একই ধরনের আমন্ত্রণে কানাডায় যাচ্ছেন। তবে তাদের কারও হোটেল বুক করা ছিল না।
তারা সম্মিলিতভাবে সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছেন। হোটেল বুক না করে বাসা ভাড়া নেওয়ার
কারণ জানতে চাইলে একেক যাত্রী একেক রকমের উত্তর দেন। সন্দেহ হলে যাচাইয়ের জন্য বিমান
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর ও দিল্লিতে কানাডার ভিসা অফিসে ই-মেইল পাঠানো হয়। সে
সময় যাত্রীদের জানানো হয়, কানাডা কর্তৃপক্ষ তাদের যাওয়ার অনুমতি দিলেই ফ্লাইটে যেতে
দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিমানের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, ওই যাত্রীদের ট্রাভেল ডকুমেন্টসে নানারকম
অসঙ্গতি ছিল। তাই সন্দেহ হওয়ায় বিমানের পক্ষ থেকে কানাডা কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল করা
হয়। ওই যাত্রীরা প্রতারণা করে ভিসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কানাডা কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, মূলত কানাডায় পাঠাতে ভুয়া আমন্ত্রণপত্র বানিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি। সেখানে পৌঁছে অনেকেই শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় চায়। কেউ আবার গোপানে কাজ করা শুরু করেন। এই ৪২ জনকে কনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমন্ত্রণপত্র বানিয়ে দেয় ট্রাভেল এজেন্সি। মূলত সিলেট ও কানাডার একটি সিন্ডিকেট ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে মানুষকে কানাডা পাঠানোর বাণিজ্য করে আসছে। বাস্তবে কানাডায় এ ধরনের কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হবে না। কানাডা পৌঁছানোর জন্য জন প্রতি ১২ থেকে ১৮ লাখ টাকা চুক্তি করে এসব এজেন্সি।
উল্লেখ্য, যে ৪২
জন যাত্রী যে বিয়ের আমন্ত্রণ দেখিয়ে ভিসা নিয়েছিলেন, সেই একই বিয়ের আমন্ত্রণে আরও অনেকে
কানাডা গিয়েছেন। অক্টোবরের মাসেই দুই দফায় ৩৩ জন কানাডায় গিয়েছেন। ‘‘ইমিগ্রেশন কন্ট্রাক্ট’করে সহজে পার হতে তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট-ঢাকা-টরেন্টো
ফ্লাইটের টিকেট কাটেন। সিলেটের ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন করতে সক্ষম হন তারা।
অবশ্য এ ঘটনায় এ
ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটের প্রবাসীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
বিমানের সমালোচনা করছেন তারা।
প্রবাসীদের অভিযোগ,
সঠিক কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন, রিটার্ন টিকেটও কেটেছেন। অথচ বিমানের কর্মকর্তারা
তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেতে দেয়নি। এতে যাত্রীরা সামাজিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের তথ্য ভুয়া হয়ে থাকলে কানাডা ভিসা দিতো না, আর যদি আটকাতেই
হয় কানাডার ইমিগ্রেশন আটকাবে। বিমান কেন আটকাবে? এই যাত্রীদের হয়ে অনেকেই আদালতে মামলা
করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের হুমকিও দিচ্ছেন।
এদিকে এ বিষয়ে বিমানের
সিইও শফিউল আজিম আরও বলেন, প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা যাত্রীদের জানিয়েছি,
তাদের কানাডায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এ ধরনের যাত্রীদের কানাডায় নিয়ে গেলে বিমানকেই
বড় অংকের জরিমানা দিতে হতো। কানাডায় বিমানের সুনাম নষ্ট হতো।
বিমান জানিয়েছে, ভুয়া কাগজপত্র কোনো যাত্রী বহন করলে কানাডা ইমিগ্রেশন আটকে দিতো। যাত্রী প্রতি এয়ারলাইনকে ১,৮০০ ডলার জরিমানা দিতে হতো। এছাড়া ফ্লাইট বন্ধ কিংবা পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীরা অতিরিক্ত তল্লাশির বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭