ইনসাইড বাংলাদেশ

সুশীলরাও কি ছুটিতে গেলেন?


প্রকাশ: 17/11/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। তফসিল ঘোষণার পর দিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ছুটিতে গেছেন। যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল যে নির্বাচনের তফসিলের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করবে। তারা ভয় ভীতি, হুমকি দেখাবে। অন্যান্য দেশগুলো একই রকম অবস্থান নেবে। বাস্তবে তেমনটা হয়নি। অনেকেই মনে করেছিলেন যে নির্বাচনের তফসিলের পরেই বিএনপি আসল আন্দোলন শুরু করবে। তাদের বিভিন্ন ক্যাডাররা আত্মগোপনে আছেন এবং তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে তারা ঢাকা শহর অচল করে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটিও হয়নি। বিএনপি যে একটি ভঙ্গুর দুর্বল রাজনৈতিক সংগঠন তা তফসিল ঘোষণার পর প্রমাণিত হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, নির্বাচনের তফসিলের পরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যারা এতদিন ধরে নানাভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে বিএনপিকে সমর্থন জানাচ্ছেন, তারাও চুপসে গেছে। তাদের চুপসে যাওয়া অবশ্য দুটি কারণ আছে। 

প্রথমত, বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতা। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত মনোভাব। আর এ কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা যাচ্ছে। ইনিয়ে-বিনিয়ে তারা সংলাপ এবং রাজনৈতিক সমঝোতার এখন কথা বলছেন। অথচ আওয়ামী লীগ যখন দুই মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সমঝোতার কথা বলেছিল, তখন তারা তাতে সাড়া দেয়নি। বরং বিএনপির কারারুদ্ধ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন যে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নীতিগত ভাবে মানলেই এবং সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই সংলাপ হতে পারে। তার আগে কোনো সংলাপ হবে না। তখন সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবীরা তাদেরকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তারা কেউ বলেননি শর্তহীন সংলাপের কথা। কিন্তু যখন বিএনপি গর্তে পড়ে গেছে, তখন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংলাপের জন্য আহাজারি আর্তনাদ করছেন। কিন্তু সেই আহাজারি আর্তনাদ এখন আস্তে আস্তে অস্পষ্ট হয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের কারণে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই নির্বাচনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো নেতিবাচক মনোভাব দেখায়নি। বরং আজকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক কিছু দুর্বৃত্ত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তরে ম্যাথু মিলার খুব স্মার্ট এবং স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। প্রকারান্তরে তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে মার্কিন অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ অবস্থানে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে হতাশার কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন যে এই মনোভাবের জন্য ভারতই দায়ী। যেই দায়ী হোক না কেন, এখন সুশীল বুদ্ধিজীবীরা কথাবার্তা কমিয়ে দিয়েছেন। কদিন আগেও যারা টকশোতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং নানা ভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে বলে অঙ্ক কষে ছিলেন, যারা সরকার কবে পদত্যাগ করবে, কোন তারিখ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে, কি ধরনের ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র নেবে ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সেই জ্যোতিষীরূপী সুশীলরা এখন গর্তে ঢুকে গেছেন। তারাও কি ছুটিতে গেছেন—এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় কৌতুক হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

এখন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কী বলবেন? ইনিয়ে-বিনিয়ে তাদের এই সংলাপের আহ্বানের মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন তারা নিশ্চয়ই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মতো বিদেশে কোথাও ছুটিতে যাবেন। কারণ ডিসেম্বর জানুয়ারির ছুটির মাস। এই সময় সুশীলদের জন্য ছুটি কাটানোর উত্তম সময়। বিভিন্ন দেশে গিয়ে চিন্তা এবং দেহ মনকে প্রশান্তি দেবেন। নতুন চিন্তা এবং কলা কৌশল আবিষ্কার করবেন নিশ্চয়ই এই ছুটিতে আমাদের সুশীলরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭