এডিটর’স মাইন্ড

পাঁচ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতির পরিবর্তন


প্রকাশ: 18/11/2023


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ করে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে আগ্রাসী অবস্থানে ছিল, সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই নমনীয় হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নমনীয় মনোভাবের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনে জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটবে। এটি সকলের প্রত্যাশার জায়গা। এই বক্তব্যের মধ্যে নতুন কিছু নেই। বিশেষ করে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নির্বাচনের তফসিলের ব্যাপারে যে রকম মনোভাব চেয়েছিল, তেমন মনোভাব পাওয়া যায়নি। এ রকম ইঙ্গিত অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগেই দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জ্যাক সুলিভানের বৈঠক এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে উজরা জেয়ার বৈঠকের পরেই দৃশ্যপটের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তবে নির্বাচনের তফসিলের পর বোঝাই যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাঁচটি কারণকে মূলত চিহ্নিত করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

১. ভারতের মনোভাব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নিয়ে মনোভাব পরিবর্তনের প্রধান কারণ ভারতের মনোভাব। কারণ এই অঞ্চলে ভারত তার নিজের স্বার্থ সবার আগে দেখে এবং এই অঞ্চলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। ভারত বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিকবার বলেছে। নরেন্দ্র মোদি নিজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে কথা বলেছেন। নয়াদিল্লিতে টু প্লাস টু সম্মেলনে সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে গত ১০ নভেম্বর। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের পরিষ্কার অবস্থান স্পষ্ট করছে। কূটনৈতিক মহল মনে করেন যে, ভারতের এই দৃঢ় অবস্থানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে নমনীয় হয়েছে। 

২. মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ ইস্যুতে মত পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হল মধ্যপ্রাচ্য। বিশেষ করে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের নতুন করে শুরু হওয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রাসী না হয়ে যুক্তরাষ্ট্র মনোযোগ দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে। সেটা তাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই কারণেই বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের মনোযোগ কমে গেছে বলেও কোনো কোনো কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে। 

৩. আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক তৎপরতা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত মনোভাবের অন্যতম একটি কারণ আওয়ামী লীগের বিকল্প কূটনৈতিক তৎপরতা বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পার্সোনাল ডিপ্লোমেসি এবং তার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তির মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ পরিস্থিতি পাল্টাতে সহায়তা করেছে বলে জানা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে একতরফাভাবে তথ্য গ্রহণ করত। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী এবং তার নেতৃত্বে অন্যরা বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছেন তখন তাদের মধ্যে একটি পরিবর্তন এসেছে।

৪. বিএনপির ধ্বংসাত্মক তৎপরতা: ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে সহিংস রাজনীতি করেছে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বলে অনেকে মনে করেন। বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি কোন ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করেনি। বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছিল যে বাংলাদেশে তারা শান্তিপূর্ণ মত প্রকাশের অধিকার দেখতে চায়। কোনো সহিংসতা নয়। বিএনপি যখন সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

৫. শেখ হাসিনার বিকল্প না থাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত মনোভাবের একটা বড় কারণ হল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প না থাকা। শেখ হাসিনার বিকল্প কে হবেন—এই প্রশ্নের কোন কূল কিনারা পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে তাদের অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭