কালার ইনসাইড

বিদেশে বাংলা সিনেমার বাজার কেমন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/03/2018


Thumbnail

ভাবুন, হলিউডের সিনেমা যদি শুধু যুক্তরাষ্টেই মুক্তি পেত? অথবা বলিউডের সিনেমা শুধু ভারতের মানুষ দেখতো? তাদের সিনেমার লগ্নি এর অর্ধেকও হত না জোর গলায় বলা যায়। এর বিপরীতের গল্পও অনেকের জানা। এমন অনেক হলিউডের সিনেমা আছে চীনে আগে মুক্তি দেয়। আবার বলিউডের অনেক সিনেমা আছে দুবাইয়ে আগে মুক্তি দেয়।

এর কারণ কী? চীনে হলিউডের সিনেমার বিশাল দর্শক শ্রেনী আছে। একটা সময় চীনের সিনেমাহল চলতোই হলিউডের সিনেমা দিয়ে। এখনো যদি বক্স অফিসের দিকে নজর দেন। অনেক বছরই হলিউডের সিনেমা সেদেশে চীনের সিনেমার চেয়েও বেশি ব্যবসা করে। যেখানে চীনের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা সংস্কৃতি আছে। টেকনিক্যাল থেকে তারা ওয়ার্ল্ডক্লাস। পাশপাশি বলিউডের সিনেমা দুবাইয়ে মুক্তি দেয়ার কারণ, অসংখ্য ভারতীয় দুবাই কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে। যারা নিয়মিত বলিউডের সিনেমা দেখে। দুবাইয়ের মানুষের মনেও বলিউড স্টাররা অন্যভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি দুবাইয়ের টুরিজম সেক্টরের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডরও হয়েছে শাহরুখ খান।

এই আলাপের সঙ্গে যোগসূত্রতা রয়েছে আমাদের বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির। আমাদের সিনেমায় বিস্তর তর্ক বহুদিন ধরে চলছে ভালো সিনেমা আগে না বড় বাজার আগে। আমাদের স্থানীয় বাজার মূলত প্রেক্ষাগৃহনির্ভর। সে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা দিনকে দিন কমে আসছে।

বিভিন্ন প্রযোজকের জরিপ মতে এই বাজার থেকে যে কোন হিট ছবি বড়জোর গড়ে ১ থেকে দুই কোটি টাকা তুলতে পারে। যেখানে আমাদের পাশের দেশ ভারতের সারাবিশ্ব মিলে এক হাজার কোটি টাকার বাজার হিসেব করে। আমেরিকার একটি সিনেমার জন্য উন্মুক্ত থাকে আট হাজার কোটি টাকার বাজার।

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা সিনেমায় আয় ধরা হয় বিশ কোটি টাকা। সে সময় ছিল ১৪০০ সিনেমা হল ও এক টিভি বিটিভির যুগ। সেই বিটিভি আর কিছু পোষ্টারের প্রমোশনের বদৌলতে ১৪০০ সিনেমা হল থেকে এত টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে!

কিন্তু এখন কী হয়? ১ কোটি টাকা মূলধনই তোলা সম্ভব হয়না সাধারনত। দেশের মার্কেট থেকে আর কতই বা তোলা সম্ভব এই হলের হাহাকারের দিনে।

আমাদের তো গোড়ায় গলদ। কখনো বাংলাদেশি কর্তারা হয়তো ভাবেইনি যে বাংলাদেশের সিনেমা বহি:বিশ্বে রপ্তানি হতে পারে। সব সময় সরকারের ওপর নির্ভরতাও শেষ কথা হতে পারে না। প্রবাসী বাঙালিদের কেউ কেউ মিলনায়তন ভাড়া করে দেশীয় সিনেমা প্রদর্শন শুরু করেন। এতে বক্স অফিস রেটিং না বোঝা গেলেও দর্শকের আগ্রহটা বোঝা যায়। সেসব জায়গায় উপচে পড়া ভীড় হয়। ইদানিংকালে কিছু সিনেমা হলিউড কিংবা বলিউডের সিনেমার সঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে বহি:বিশ্বে। সেখানকার দর্শকেরও নাকি রেসপন্স বেশ।

সারাবিশ্বে বাঙ্গালিরা ছড়িয়ে আছে। যেমন এক কানাডার কথাই যদি চিন্তা করা হয়। কানাডায় সব মিলিয়ে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশির বসবাস, যার সিংহভাগ থাকে টরন্টোতে প্রায় ৭৫ হাজার। কানাডাতে যেখানে সব মিলিয়ে থাকে ১.৫ লাখ সেখানে এক নিউইয়র্ক শহরেই থাকে ৫ লাখ লোক। বিভিন্ন শহর মিলিয়ে আমেরিকাতে মোট বাংলাদেশি থাকে প্রায় ৮-৯ লাখ। এখন যে বাজার আছে, তাতে একটা সাধারণ সিনেমাও ৫০ লাখ টাকা ঘরে ঘরে তুলতে পারবে। আর ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ কিংবা ‘নবাব’র মত হিট সিনেমা ১-১.৫ কোটির নিচে নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভালো করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো প্রমোশন। এই সময়ে সবচেয়ে বড় হিট ভারতীয় সিনেমা ‘দাঙ্গাল’ ৬ মাস আগে থেকেই প্রচারণা শুরু করে দিয়েছিল। আর ভারতীয় সিনেমা তাদের দূতাবাসগুলোর সহযোগিতায় বিশ্বে বাজার তৈরি করছে ২০-২৫ বছর ধরে।বাংলাদেশের সিনেমার বাজার বিস্তৃত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইংল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াতেও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি একটি সিনেমার জন্য বিশ্ববাজারে উন্মুক্ত হতে পারে দুই মিলিয়ন ডলারের ওপর বাজার বা প্রায় বিশ কোটি টাকার বাজার। এর জন্য চাই আমাদের দূতাবাসগুলোরও সহযোগিতা। তাদের প্রচারণায় ও নানা আয়োজনে হাত বাড়ালে বাজার আরো বড় হবে।

বিদেশে সিনেমা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের যেমন আরেকটু কোমল হওয়া দরকার। তেমনি নির্মাতাদেরও কারিগরি দিক খেয়াল রেখে ছবি নির্মাণ করা উচিত। কমপক্ষে টুকে রেজ্যুলেশনে নির্মাণ হতে হবে।  সাউন্ড আন্তর্জাতিক মান ৫: ১। দেশ অনুযায়ী সেই ভাষার সাবটাইটেল আবশ্যক। কী ধরনের সিনেমা? উঁচুমানের বিনোদনমূলক সিনেমা। সে সিনেমা যে হলিউড স্টাইলে হতে হবে তা নয়। দেশের সংস্কৃতি নিয়ে ভালো মানের ছবি। শেকড় টান দেয় এমন গল্প। সেটা অ্যানিম্যাটেডও হতে পারে। এই সময়ে গল্প বলতে হবে। আমাদের বীরত্বগাথা যেসব গল্প। প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন অনুভব করেন এটি বাংলাদেশের সিনেমা। নির্মাতারা আর কতগুটিয়ে রাখবে নিজেদের। প্রযোজকরা বাংলাদেশের হলের ভরসায় আর কতদিন থাকবেন। সারাবিশ্বের ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা সিনেমা।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭