ইনসাইড বাংলাদেশ

যে কারণে পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে


প্রকাশ: 18/11/2023


Thumbnail

কদিন আগেও পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য বিএনপির ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ছিল। বিশেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ দিচ্ছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন রকম দেন দরবারও করা হচ্ছিল এসব দেশের কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে। কিন্তু তারাই এখন বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপির ওপর বিরক্ত এবং অসন্তোষ প্রকাশ করতে কোন রাখঢাক করছেন না ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ এসব পশ্চিমা দেশগুলো। এর একাধিক কারণ রয়েছে। 

বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতা যারা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ করছিলেন, তারা বলছেন যে এখন পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির সঙ্গে আর কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। বরং তারা বিএনপিকে আগে আন্দোলন বন্ধ করা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে। 

কেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? এর একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে-

১. জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে বারবার সতর্ক করেছিল যে কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন সহিংস দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিশেষ করে জ্বালাও পোড়া এবং সহিংসতা কোনোভাবে পছন্দ করবে না ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপি এবং তার দোসর জামায়াত সেই সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। সারা ঢাকা শহরে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা পছন্দ করেনি বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো। আর এ কারণেই বিএনপির ওপর আস্থা হারিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগেও বিএনপির নেতৃবৃন্দকে তারা বলেছেন, আন্দোলনের সহিংসতার পথ পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা।

২. অনড় অবস্থান: বিএনপির অনড় অবস্থান বিশেষ করে যখন সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সেসময় বিএনপি সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তখন আওয়ামী লীগ শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিল। কিন্তু সেই সংলাপে বিএনপি যোগ দেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সংলাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল এবং তারা মনে করত যে সংলাপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটি রাজনৈতিক দল একটি সমঝোতার জায়গায় আসতে পারবে। কিন্তু বিএনপি সেই সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলেই মনে করে এসব পশ্চিমা দেশগুলো।

৩. নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা: বিএনপি এবং তার দোসররা নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যেভাবে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে যে নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে আগ্রহী। শুধু আগ্রহী নয়, এ ব্যাপারে তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না বলেও বহু পশ্চিমা দেশগুলোর ধারণা। এরকম বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনকে বিনা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং তার পদত্যাগ দাবি করার বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি পশ্চিমা দূতাবাসগুলো।

৪. জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক: বিএনপি বলেছিল যে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি এবং জামায়াতের সম্পর্ক আবার প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে দুটি রাজনৈতিক দল এখন একসঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে। ইউরোপের দেশগুলো মনে করে যে, জামায়াত একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন এবং এই সংগঠনের সঙ্গে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের মূল চেতনায় আঘাত করেছে। আর এ কারণেই বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন করতে পারছে না।

৫. ভারতের অবস্থান: বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের সুস্পষ্ট অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে। কারণ এই দেশগুলো ভারতের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ভারত একটি বড় অর্থনীতির দেশ। আর এই সমস্ত দেশের রাজনীতিতে ভারতের একটি বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির প্রতি আগে যে তারা সহানুভূতির চোখে দেখত, যাদের নির্বাচন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কথা বলত, তারাই এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপি থেকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭