ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচ চ্যালেঞ্জ


প্রকাশ: 20/11/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করবেনা এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচনের পথ এখনও কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বরং সামনে আওয়ামী লীগকে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে। এই নির্বাচন একদিকে যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে তেমনই আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় গুলো এমন স্পর্শকাতর যে একটু এদিক ওদিক হলেই নির্বাচন নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার সংকট তৈরি হবে। 

আওয়ামী লীগ চায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে একটি নজির স্থাপন করতে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবুও আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। কিন্তু নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগের জন্য পাঁচটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই পাঁচটি চ্যালেঞ্জ যদি আওয়ামী লীগ মোকাবেলা করতে পারে তাহলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাদের জন্য সম্ভব হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে যে নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলেও গ্রহণযোগ্য হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন: আওয়ামী লীগের প্রথম চ্যালেঞ্জ হল প্রার্থী মনোনয়ন। যদি ভালো প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, এলাকার জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয় যাদের দেখে জনগণ ভোট দিতে উৎসাহিত হবে, কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হবে এবং কর্মীরা ভোটের মাঠে কাজ করবে এমন প্রার্থী মনোনয়ন দিলে নির্বাচনের ব্যাপারে জন আস্থা তৈরি হবে। 

২. ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা: আওয়ামী লীগ বলছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানে হলো ভোটারের উপস্থিতি। অতীতের কিছু উপনির্বাচনে দেখা গেছে ১৩, ১০ বা ৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরকম ভোটার উপস্থিতি হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে যেন ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি হয়। আর ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এবং নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। নির্বাচনে অন্তত  ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি করা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। 

৩. ভোটে কারচুপি, জাল ভোট প্রতিরোধ:  আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো কোন ভাবেই যেন নির্বাচনে কারচুপি না হয়, জাল ভোট দেওয়ার প্রবণতা না দেখা যায়। লক্ষ্মীপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়ার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যে নির্বাচন অর্থহীন যে নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা একদিনও বসতে পারবে না, সেই নির্বাচনে এ ধরনের নজিরবিহীন কারচুপি অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত। জাতীয় নির্বাচনে কোন অতি উৎসাহী প্রার্থী যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী তৎপরতা হিসাবে বিবেচিত হবে।

৪. বিদ্রোহী প্রার্থী: আওয়ামী লীগের এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। যারা মনোনয়ন পাবেন না তাদের একটা বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন। বিশেষ করে বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর যে সমস্ত স্থানে অন্য দলের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়াবে সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট কাটাকাটি হবে। ফলে আওয়ামী  লীগের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়তে পারে। এবার তৃণমূল বিএনপি যেমন ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে ঠিক তেমনই কয়েকটি ইসলামী দল এবং জাতীয় পার্টিও ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারে। এই সমস্ত প্রার্থীদের ভিড়ে আওয়ামী লীগের ভোট যদি ভাগ হয়ে যায় তাহলে অনেক আসনে আওয়ামী লীগ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

৫. শরিকদের মন রক্ষা করা: আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ১৪ দলীয়  শরিকদের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভালো না। শরিকরা না থাকার মতো করে আছে। তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং মান অভিমানও রয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে শরিকদের মন রক্ষা করতে হবে। কারণ নির্বাচনের পরেও আন্দোলনের ধারা থাকবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতার ইস্যুটি থাকবে। এ কারণে শরিকদের আস্থায় নিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হবে। শরিকদের মন রক্ষা করাও আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭