নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তা বাতিলের দাবিতে দুইদিনের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শেষ হবে আগামীকাল সকাল ৬টায়। তবে এরই মধ্যে আগামী বুধবার থেকে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যদিও এ সমস্ত হরতাল বা অবরোধ কোনোটাই এখন আর কার্যকর হচ্ছে। তারপরও ষষ্ঠ দফায় এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি সহ সমমনা একাধিক রাজনৈতিক দল। উল্লেখ্য যে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ডব করার অভিযোগে পরের দিন ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল দলটি। তবে একবার হরতাল অন্যবার অবরোধ এই দুইয়ের গোলকধাঁধায় পড়েছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে পরিচিত থাকলেও অনেকেই হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেন না। তবে দুটি কর্মসূচিতেই প্রায় একই ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
হরতাল
হরতাল হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। হরতালের সময় সকল কর্মক্ষেত্র, দোকান, আদালত বন্ধ থাকে। তবে সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স, দমকলবাহিনী, গণমাধ্যমসমূহ এর আওতার বাইরে হয়ে থাকে। হরতাল গুজরাটি শব্দ। 'হর' মানে সব জায়গায় আর 'তাল' মানে তালা। অর্থাৎ হরতাল মানে সব জায়গায় তালা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হরতালের প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে 'তমুদ্দিন মজলিস' প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে হরতাল বেশ প্রচলিত একটি কর্মসূচি।
অবরোধ
কোনো দাবি আদায়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা হলো অবরোধ। অবরোধ হচ্ছে কর্মসূচি পালনে জনগণকে বাধ্য করা। অবরোধে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। পরিবহন চলতে দেওয়া হবে না। অবরোধে মানুষের সাড়া দেওয়া বা না দেওয়ার কিছু নেই, বরং কর্মসূচি পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়। অবরোধের ইতিহাস বিভিন্ন আমলেই দেখা গেছে। গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা আছে। ১১৮৭ সালে সালাউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম অবরোধ করেন।
কোনটা বড়
রাজনীতিবিদরা মনে করেন হরতাল, অবরোধের চেয়ে বড় কর্মসূচি। এটা চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি। কেননা দলের দাবির প্রতি যখন বেশির ভাগ মানুষ একমত পোষণ করে তখন এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়। এটা না হলে হরতালে সফলতা পাওয়া যায় না। কেননা এখানে বেশিরভাগ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়। না হলে কর্মসূচি সফল হয় না। অন্যদিকে অবরোধে যেহেতু বাধ্য করার বিষয় থাকে, তাই মানুষের সমর্থন সম্পর্কে বোঝা যায় না।
তবে হরতাল বা অবরোধ যেটাই বড় হোক না কেন দেশের মানুষ এখন এর কোনোটাই মানছেন না। হরতাল বা অবরোধ যাই ডাকা হোক না কেন সাম্প্রতিক সময়ে জনসাধারণের কোনো ধরনের সম্পৃর্কতা দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, হরতাল বা অবরোধের দিনগুলোতেও মানুষ যেভাবে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে অতি শিগগির হয়তো শব্দ দুটি হারিয়ে যেতে পারে।