ইনসাইড পলিটিক্স

এবার তাদের শেষ নির্বাচন


প্রকাশ: 22/11/2023


Thumbnail

আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে যদিও বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না তারপরও সারা দেশ জুড়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে তাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছে। আগামীকাল থেকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন বোর্ডের সভার পর আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীতা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। 

এবারের নির্বাচন নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতারা যুদ্ধ করেছিলেন বা ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের অনেকেরই এবারের নির্বাচনই শেষ নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জীবন সায়াহ্নে এসে এবার নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করছেন। এরপরে নির্বাচন তারা করতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। যে সমস্ত নেতাদের এবারের নির্বাচনই শেষ নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বা যারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ বারের নির্বাচনকে শেষ নির্বাচন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন-

আমির হোসেন আমু: আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি থেকে নির্বাচিত এমপি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং পরীক্ষিত একজন নেতা। পচাঁত্তরের পরবর্তীতে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাল ধরেছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন, তাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু অন্যতম। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণের পর যারা তার পাশে ছিলেন নিঃশর্তভাবে, তাদের মধ্যে আবু অন্যতম। কিন্তু এক-এগারোর সময় তিনি সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে প্রথমবারের মতো রাজনীতিতে বিতর্কিত হন। কিন্তু তারপরও এখনও তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে স্বীকৃত। জাতীয় রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এবারের নির্বাচনের পর আর পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে দেখা নাও যেতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তোফায়েল আহমেদ: জাতির পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে আসা এবং জাতির পিতার আশ্রয়ে রাজনীতিতে তারকা হয়ে ওঠা তোফায়েল আহমেদ নিজেই ঘোষণা করেছেন এই নির্বাচনই তার শেষ নির্বাচন হবে। ভোলা একাধিক মতবিনিময় সভায় তিনি এ রকম বক্তব্য রেখেছেন। শারীরিক ভাবেও কিছুটা অসুস্থ তোফায়েল আহমেদ জীবন সায়াহ্নে এসে এই নির্বাচনটিকে তার শেষ নির্বাচন হিসেবে দেখছেন। তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য এবং ঐতিহাসিক। তিনি সেই বিরল রাজনীতিবিদ যিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার রাজনীতিতে উত্থান ঘটেছে অত্যন্ত নাটকীয় ভাবে। তোফায়েল আহমেদের এই উত্থান রাজনীতিতে অনেকের কাছে বিস্ময়। কিন্তু পচাঁত্তরের ১৫ আগস্টে তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক কালে এই প্রশ্ন আরও বেশি করে উঠছে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের লেখায় তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন উঠুক না, উঠুক তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। রাজনীতি থেকে তার বিদায় একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

বেগম মতিয়া চৌধুরী: অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচিত হন। একদা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বেগম মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ন্যাপ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রশংসিত। তার রাজনীতির বড় ধরনের উত্থান ঘটে এক-এগারোর সময়ে যখন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা সংস্কারপন্থী হয়ে উঠেছিলেন, তখন অগ্নিকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতির প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে কর্মীদের প্রিয়ভাজন হন। সৎ মেধাবী হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরী এখন সংসদের উপনেতা। এই নির্বাচনে তার শেষ নির্বাচন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়াও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহসহ আরও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার এবারের নির্বাচনই শেষ নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭