ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচনে যেতে চান মান্না


প্রকাশ: 24/11/2023


Thumbnail

মাহমুদুর রহমান মান্না, তিনি এখন কোথায়, কি করছেন? আন্দোলনের কোন কর্মসূচিতে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দেখা যাচ্ছে না। কোন টকশোতেও তিনি নেই। একসময় সরকারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সরব এবং বিএনপির চেয়ে বড় বিএনপি হয়ে ওঠা এই সাবেক বাম নেতার অবস্থান নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই রহস্য ঘণীভূত হয়েছে। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে মান্নার এখনও যোগাযোগ রয়েছে নিয়মিত। আর মান্না এখন সরকার এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছেন এমন নিশ্চিত তথ্য দিয়েছেন একাধিক মহল। সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে এবং এই বৈঠকগুলোর ফলে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্র আভাস দিচ্ছে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বাসদের রাজনীতি করতেন, বাসদের রাজনীতি থেকে তিনি আওয়ামী লীগে এসেছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতা হিসেবে পরিচিতও পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনে তিনি প্রায় রাতারাতি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী হন এবং শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র যারা করেছিলেন তাদের অন্যতম হোতা ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এর পরে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে কক্ষচ্যুত হন। নিজেই নাগরিক ঐক্য নামে একটি নামসর্বস্ব সংগঠন গড়ে তোলেন, যে সংগঠনের একমাত্র নেতা তিনি। নাগরিক ঐক্য আস্তে আস্তে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় এবং ২০১৮ নির্বাচনে মান্না ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বগুড়ায় নির্বাচন করতে যান এবং সেখানে পরাজিত হন। এরপর তিনি ছিলেন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার। 

তারেক জিয়া একটি উপনির্বাচনে মান্নাকে বিএনপিতে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মাহমুদুর রহমান মান্না নিজেই সেই তথ্য স্বীকার করেছেন। তবে শেষপর্যন্ত মান্না বিএনপিতে যোগ দেননি। কিন্তু বিএনপিতে যোগ না দিলে কি হবে! মান্না তারেক এবং বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজনে পরিণত হন। এর কারণে তিনি বিএনপির অন্যান্য নেতাদেরকেও হুকুম দিতেন এবং নানা রকম অযাচিত পরামর্শ দিতেন এমন খবরও বিএনপিতে রয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে একধরনের বিরক্তিও লক্ষ্য করা যায়। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যখন এক দফা আন্দোলন শুরু করে তখন মান্না ছিলেন অত্যন্ত সরব। কোন অবস্থাতেই সরকারের সঙ্গে আপস হবে না, নির্বাচনে যাওয়া যাবে না, সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র ইত্যাদি নানা কথা তিনি প্রতিনিয়ত বলতেন। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের ঘটনার পর আস্তে আস্তে দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। যে মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব ছিলেন তিনি হঠাৎ করে গর্তে লুকিয়ে যান। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, মান্না বোধহয় আত্মগোপনে আছেন। তার বিরুদ্ধে হয়তো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। এজন্য তিনি নিজেকে বাঁচাতে লোকচক্ষুর অন্তরালে গেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুটি জায়গায় মান্নাকে সরকারের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে এবং এইসব বৈঠকের ব্যাপ্তি ছিল ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। দীর্ঘ বৈঠকে মাহমুদুর রহমান মান্না নীতিগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এমনটি জানিয়েছেন একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। তবে মান্না একা দলছুট ভাবে নির্বাচনে যেতে চান না। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। 

গত ২ দিন ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না নিরবিচ্ছিন্নভাবে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন এবং তারেক জিয়াকে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে উকালতি করছেন। তবে এখন পর্যন্ত মাহমুদুর রহমান মান্না তারেক জিয়াকে নির্বাচনের পক্ষে আনার ক্ষেত্রে সফল হননি। তবে চেষ্টা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাই এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে ট্রাম্প কার্ড বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭