এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিন কৌশল


প্রকাশ: 24/11/2023


Thumbnail

বাংলাদেশ নিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত সরব ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক কূটনীতিকরা বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তারা বাংলাদেশে নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকম পরামর্শ দিয়েছেন, হুমকিও দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে এবং সেই ভিসা নীতি গত সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলেও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। কিন্তু যে মুহূর্তে ২৮ অক্টোবর বিএনপি সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং তাণ্ডব করল, সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলে যেতে শুরু করে। এরপর অবশ্য ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন, বৈঠক করেছেন। মার্কিন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিলেন, তারা যেন শর্তহীন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।

কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আর সংলাপ হয়নি। এককভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিলের পর পরই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উড়ে চলে যান। প্রথমে কলম্বো, সেখান থেকে ওয়াশিংটনে। এখন পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরেননি। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় এরকম একটি রুটিন বক্তব্য প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল কি এটি নিয়ে কূটনীতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে নানা রকম আলোচনা। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি কৌশলে এগোচ্ছে। প্রথমত, তারা এখনও গোপনে গোপনে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে এবং এ নিয়ে তারা তাদের মিত্র দেশগুলো অর্থাৎ ইউরোপের দেশগুলোর ওপর বেশি নির্ভর করছে । ইউরোপের দেশগুলো গত কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার জন্য একটা প্রচেষ্টা হচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া হলো যে, বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন হোক যেখানে সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। অর্থাৎ সোজাসাপটা হলো বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক বিবেচিত হবে না বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে বলেছিল। কিন্তু এখন যেহেতু বিএনপি নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে সরে রেখেছে নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়েছে, সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে একটি মৌন ব্রত অবলম্বন করছে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল অব্যাহত রাখবে বলে মনে করছেন কোন কোন কূটনীতিকরা। 

দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রতি আস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে চীনের আধিপত্য বন্ধ দেখতে চায়। বাংলাদেশের বাজার চায়, বঙ্গোপসাগরে হিস্যা  চায়। এই বিষয়গুলোর জন্যই বাংলাদেশে নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি নিয়ে তারা চাপ সৃষ্টি করছিল বলে কোন কোন কূটনীতিক মনে করেন। আর এই বিষয়টি নিয়ে এখন ভারত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করছে এবং ভারত সর্বশেষ গত ১০ নভেম্বর টু প্লাস টু সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবস্থানের কথা সোজাসাপ্টা ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ভারতের এই অবস্থানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসলে বাংলাদেশ নিয়ে কিছু করার নেই এমনটা মনে করছেন কূটনীতিকরা। কারণ ভারতের অবাধ্য হয়ে বাংলাদেশে কিছু করলে সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ বয়ে আনবে না। আর তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আগ্রহ এবং আকাঙ্ক্ষার জায়গাগুলো তা ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে নির্বাচনের পর বিষয়গুলো দেখা হবে। এরকম একটি কৌশল থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনটাই মনে করছেন কোন কোন মহল। 

তৃতীয়ত, অনেকে মনে করছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে বিরাজনীতিকরণ এবং তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করছিল তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তারা আসলে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভুল করবেই, অতি উৎসাহীরা কারচুপি করবেই—এরকম ভুলের অপেক্ষায় আছে যুক্তরাষ্ট্র। এ রকম ভুল হলেই ভিসা নীতি সহ নানা রকম সাঁড়াশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যে ব্যবস্থাগুলো আওয়ামী লীগকে বিপর্যস্ত করবে এবং হয়তো শেষ পর্যন্ত তারা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। এই তিন কৌশলের যে কোন একটি বা একাধিক কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনটাই মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭