ক্লাব ইনসাইড

জাবিতে প্রজাপতি মেলা: নানান রং এর প্রজাপতির ডানায় প্রকৃতি সংরক্ষণের অঙ্গিকার


প্রকাশ: 25/11/2023


Thumbnail

‘সকালে উঠেই দেখি প্রজাপতি একি আমার লেখার ঘরে, শেলফের পরে মেলেছে নিস্পন্দ দুটি ডানা-রেশমি সবুজ রঙ, তার পরে সাদা রেখা টানা।' প্রজাপতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার পড়ার পর মনে হয়  কল্পনায় যত রঙ আঁকা যায়, হয়তো তার সবগুলো রঙেরই প্রজাপতি থাকা সম্ভব।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী-পাখির মতো প্রজাপতিরও যে ভূমিকা রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। অনেকেই জানে না যে প্রজাপতি পরিবেশের সুস্থতার নির্ণায়ক। তাই তো  'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এই স্লোগানকে ধারণ করে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘প্রজাপতি মেলা-২০২৩’। 

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। 

মেলায় দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি নিয়ে  ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। যেখানে শিশু কিশোররা তাদের রঙিন তুলিতে ফুটিয়ে তোলে প্রজাপতির বিভিন্ন অবয়ব। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের  প্রায় শতাধিক শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করে। এর আগে অনুষ্ঠিত কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রজাপতি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নে অংশগ্রহণ করে শিশু-কিশোররা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি চত্বরে আয়োজন করা হয় প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এতে অনেকের তোলা প্রজাপতির বেশ কয়েকটি নির্বাচিত ছবি স্থান পায়।

এছাড়া অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রজাপতির আদলে তৈরি করা ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারী প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণী। 

শহরের যান্ত্রিকতা, কোলাহল থেকে থেকে একটুখানি হাফ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে এসেছেন প্রকৃতির কোলে রংয়ের চাদর ছড়ানো এই পতঙ্গটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। 

শহুরে জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে আব্দুস সালাম সাহেব তার দুই সন্তান সানহা ও সাব্বিরকে নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে প্রজাপতি মেলা উপভোগ করতে এসেছেন। প্রজাপতির এই মেলায় এসে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি দেখতে তারা ছোটাছুটি করছে এদিক-সেদিক। তাদের মাঝে সে কি আনন্দ! এর মাঝেই আবার সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে। 

আনন্দ প্রকাশ করে আব্দুস সালাম বলেন, ‘ফেসবুকে প্রজাপতি মেলার কথা জানতে পেরে মেয়েদের নিয়ে ছুটে এসেছি প্রজাপতি মেলায়। ইট-পাথরের শহুরে জীবনে প্রজাপতিরদেখা মেলা ভার। ছেলে-মেয়েরাও পাপেট শো, গান, ছবি আঁকা উপভোগ করে চমৎকার সময় পার করেছে।’ 

মেলার দিনব্যাপী আয়োজনকে ঘিরে শিশু-কিশোরদের পাহাড় সমান আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। হরেক রকমের প্রজাপতির ওড়াউড়ি শিশু-কিশোরদের মনে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিচিত্র ও মনোমুগ্ধকর এসব প্রজাপতির পাখা যেন রঙ ছড়াচ্ছে শিশু-কিশোরদের মনে। সাভার থেকে মায়ের  সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছেন ছোট্ট জোহান। বিচিত্র রকমের প্রজাপতির সাথে পরিচিতি, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারা এবং পাপেট শো দেখতে পাওয়ায় তার চোখে- মুখে ফুটে উঠে আনন্দের উচ্ছ্বাস। 

এছাড়া দিনব্যাপী নানা আয়োজনে এবারের 'প্রজাপতি মেলা' আমন্ত্রিত অতিথিরা ঘুরে দেখেন মেলার বিভিন্ন স্টল। এবারের আয়োজনে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ারুল ইসলামকে Butterfly Award -2023 প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা কর্মের জন্য চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো: জহির রায়হানকে Butterfly Young Enthusiast Award- 2023  দেয়া হয়।

মেলার আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিলতো। কিন্তু ক্যাম্পাসে নগরায়নের ফলে প্রজাপতি তার আবাসস্থল হারাচ্ছে। এখন ক্যাম্পাসে ৫৭ প্রজাতির দেখা মিলে। আমরা বৃক্ষরোপণের ফলে হয়তো বড় বড় গাছ লাগাই, কিন্তু নিচের ঝোঁপঝাড় হচ্ছে প্রজাপতির আবাসস্থল। সেটা একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর লাগানো হয় না। ফলে দিন দিন কমছে প্রজাপতির পরিমাণ। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই প্রাণ-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘প্রজাপতি মেলা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় আমরা দুটি মাস্টারপ্ল্যান করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি রক্ষায় একটা বায়োডাইভারসিটি প্ল্যান আরেকটি একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রজাপতি মেলায় প্রজাপতির আদলে যে সকল প্রদর্শনী হচ্ছে তা শিশুদের মন ও মননে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।’ এসময় তিনি দর্শনার্থী, প্রজাপতি বিশেষজ্ঞসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার মেলা উপলক্ষে প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। যেখানে ছিল জীবন্ত প্রজাপতি, প্রজাপতি বান্ধব বৃক্ষাদি ও প্রজাপতির প্রজনন ক্ষেত্রসহ উন্মুক্ত বাগান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭