আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নানা সময়ে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। কখনও কখনও তাকে আত্মকেন্দ্রিক নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কোনো কোনো সময় মনে করা হয়েছে যে, তিনি শুধু নিজের স্বার্থ দেখেন, দলের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের জন্য কিছুই করেন না। কিন্তু সব বিতর্কের অবসান ঘটালেন ওবায়দুল কাদের নিজেই। এবার মনোনয়ন বোর্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অন্য রূপে দেখা গেল। যারা দলের জন্য কাজ করেন, যারা সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সংগঠন যাদের ওপর নির্ভরশীল সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওবায়দুল কাদের তৎপর ছিলেন, সাহস ছিলেন এবং কোনো কোনো জায়গায় কথা বলেছেন।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম এবং এস এম কামাল হোসেনের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এটা নিয়ে তিনি বারবার আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত নির্বাচনে এরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি এবং মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকই ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন। ওবায়দুল কাদের সে সময় নীরবতা পালন করেছিলেন এমন কথাও বাজারে চালু হয়েছিল। কিন্তু এবার ওবায়দুল কাদেরকে অন্য ভাবে দেখা গেল। তিনি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন এবং বারবার তারা যেন মনোনয়ন পান সেটি নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করছেন। এ বারের নির্বাচনে অন্য যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নির্বাচনই শেষ নয় এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। কারণ নির্বাচনের আগে পরে নানারকম ষড়যন্ত্র হবে, চক্রান্ত হবে। এমনকি বিএনপি নির্বাচনের পরও আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে এমন শঙ্কার কথাও শোনা যায়। আর এই সমস্ত বিবেচনায় রেখে আওয়ামী লীগ যেন সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল না হয়ে পড়ে, সাংগঠনিক শক্তি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে সে দিকে নজর রেখেছিলেন।
ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিজেই তার ঘনিষ্ঠদেরকে বলেন, তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তার জীবনে যা কিছু অর্জন করতে পারেন, সব কিছু তিনি পেয়েছেন। কাজেই এই সময় তিনি দলের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন এবং অবদান রাখলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রশংসায় তিনি ভাসছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা গত একবছর ধরেই এক অন্যরকম ভাবমূর্তিতে নিজেকে উন্নীত করেছেন। বিশেষ করে সংগঠনে সময় দেওয়া, বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করা, বিএনপির সমালোচনা করা ইত্যাদি নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি পাদপ্রদীপে এসেছেন।
এক বছর আগে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই তার সমালোচনা করতেন। দলের স্বার্থ সংরক্ষণ তিনি করেন না এমন অভিযোগ করতেন। কিন্তু গত এক বছরে অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি যেভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন, দলের নেতাকর্মীদের আস্থার স্থলে পরিণত হচ্ছে তাতে সবার শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকা এই ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। মাটি এবং মানুষের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক রয়েছে তার প্রমাণ দিলেন তিনি এবার।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলা, সংগঠনকে গোছানো এবং সংগঠনকে সচল রাখার ক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের ভূমিকা এখন সর্বমহলে প্রশংসিত। তিনি আওয়ামী লীগের এখন সকলের আস্থা এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।