ইনসাইড গ্রাউন্ড

ম্যারাডোনা একজনই ছিলেন


প্রকাশ: 25/11/2023


Thumbnail

বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি তারকা আর্জেন্টিনার ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনা ৬০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। বুয়েনাস আয়ার্সে তার বাসভবনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

 

আর্জেন্টিনার সাবেক এই ফুটবল মিডফিল্ডার এবং ম্যানেজার ম্যারাডোনার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ২০২০ সালের নভেম্বরের শুরুর দিকে তার মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। কিন্তু, মৃত্যু যাকে ডাক দিয়েছে তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতেই হবে। তাইতো ডিয়াগো ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।

বিশ্ব ফুটবলের অবিসংবাধিত এই নায়কের পুরো নাম দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। পুরো বিশ্ব যেন মুহূর্তেই থমকে পড়ে কিংবদন্তির প্রস্তানের খবরে। আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে শোকের কালো ছায়া।

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ম্যারাডোনা। ল্যানুসের সেই ছোট্ট ছেলেটি বাঁ পায়ের জাদুতে বিশ্বকে মোহিত করেছেন। ভক্ত-সমর্থকদের কাছে ‘এল পিবে দে অরো’ বা (সোনালি বালক) নামে পরিচিত ছিলেন ম্যারাডোনা। আজ ৩ বছর হলো পৃথিবী থেকে মহানায়কের হারিয়ে যাবার।

 

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই নিজের মেধা ও ফুটবল দক্ষতায় অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয় করেন ম্যারাডোনা। ১৯৭৯ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে গোল্ডেন বল জিতেছিলেন এই মহানায়ক। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনা খুঁজে পায় তাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হওয়া নতুন এক তারকাকে। যিনি পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বের কাছে আর্জেন্টিনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফুটবল মাঠে বাঁ পায়ের অনবদ্য জাদুশৈলী দিয়ে।

১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন একক প্রচেষ্টায়। সেই প্রতিযোগিতায় মাত্র ১১ সেকেন্ডের তাণ্ডবে ১১ টাচে তিনজন ইংলিশ ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে শতাব্দীর সেরা গোলটি করেন ম্যারাডোনা। এই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই আরও একটি গোল হাত দিয়ে করেছিলেন ম্যারাডোনা। সেই গোলটিকে পরবর্তীতে ঈশ্বরের গোল নাম আখ্যা দিয়েছিলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি।

 

১৯৯০ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলেন ম্যারাডোনা। সেদিন ইতালিয়ানরা আলবিসেলেস্তেদের জন্য গলা ফাটিয়েছিল। কারণটা সেই নাপোলির ম্যারাডোনা। যিনি ১৯৮৪ সালে ইতালির এক সাদামাটা দল নাপোলিতে যোগ দিয়ে একক নৈপুণ্যে অখ্যাত ক্লাবকে ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ট্রফি ইউরোপা লিগ জয়ের আনন্দে মাতান নেপলসবাসীকে। সেই সঙ্গে দুবার ইতালিয়ান সেরি আ লিগের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন নাপোলি তারকা। এরপরই বিশ্বময় জ্বলজ্বল করে ওঠে নাপোলি ক্লাবের নাম। যিনি নেপলস শহরের মানুষের কাছে হয়ে ওঠেন এক মহানায়ক। আর তাইতো এই মহানায়কের মৃত্যুতে নাপোলির তৈরি করা স্টেডিয়ামে প্রিয় তারকার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার ব্রোঞ্জমূর্তি বসিয়েছে নাপোলি ক্লাব।

 

মোট ৬টি ক্লাবের হয়ে পেশাদার ফুটবল খেলেছেন ম্যারাডোনা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজ শহরের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক ঘটে ফুটবল ঈশ্বরের। এরপর ইউরোপের সেভিয়া, বার্সেলোনা, নাপোলির হয়ে মাঠ মাতান ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের হয়েও বাঁ পায়ের জাদু দেখান তিনি।

 

নিজের বাঁ পায়ে ফুটবল বিশ্বকে শাসন করলেও মুখে ছিল অসহায় মানুষের জয়গান। ‘ফুটবল ঈশ্বর’ নামে খ্যাতি পেলেও ভীষণ রকম মানবিক গুণের অধিকারী ছিলেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার দরিদ্র এক অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন, মাঝে সঙ্গী ছিল চরম ক্ষুধা, ছিল দারিদ্র্যের সঙ্গে এক অসম লড়াই।

 

কিউবার কালজয়ী প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো ছিলেন ম্যারাডোনার জীবনের আদর্শ। নিজের বাঁ পায়ে এঁকেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ট্যাটু। আর হাতের বাহুতে রেখেছিলেন আরেক বিপ্লবী চে গুয়েভারার ট্যাটু। দক্ষিণ আমেরিকার আরেক মানবিক নেতা হুগো শ্যাভেজেরও বন্ধু ছিলেন এই মহানায়ক। নির্যাতিত অসহায় ফিলিস্তিনের পক্ষেও প্রতিবাদের ধ্বনি তুলতেন মহাকালের মহানায়ক।

 

ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা ৩ বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেও মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পাওয়া ডিয়াগো ম্যারাডোনা বেঁচে থাকবেন চিরকাল। কারণ, ফুটবলে ম্যারাডোনা একজনই। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭