ইনসাইড পলিটিক্স

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক


প্রকাশ: 27/11/2023


Thumbnail

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক সাগর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বর্তমান এমপি সাহিদুজ্জামান খোকনের জায়গা দখল করেছেন। নানা কারণে স্বতন্ত্র পার্থীর ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা এ আসনটিতে একদিকে নতুন মুখ অন্যদিকে দলীয় প্রধানের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের দ্বার খুলে দেওয়ার ঘোষণায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়েছে।

 

রোববার ( ২৬ নভেম্বর) বিকেলে অনেকটাই আকস্মিকভাবে নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় জায়গা করে নেন ডাঃ সাগর। তিনি মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক। তার পিতা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধঅ নুরুল হক ছিলেন গাংনীর প্রথম এমপি। নুরুল হক সাহেবের সম্মানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সরকার গঠনের পর ডাঃ সাগরের বোনকে মহিলা এমপি বানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ডাঃ আবু সালেহ মোঃ নাজমুল হক সাগর তখন কর্মরত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে। পরে তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ২০২২ সাল থেকে গাংনীর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ওই বছরে অনুষ্ঠেয় গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে তিনি প্রার্থী ছিলেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগে জায়গা না হলেও পরবর্তীতে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর তিনি স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান।

 

মনোনয়নের চুড়ান্ত নাম প্রকাশের পর ডাঃ নাজমুল হক সাগরের পক্ষে আনন্দ মিছিল করেন তার কর্মী সমর্থকরা। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের রাস্তা পরিস্কার হওয়ায় সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করে। ইতিমধ্যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীকও নির্ধারণ করেছেন।

 

ছিটকে গেলেন বর্তমান এমপি:

মেহেরপুর-২ আসনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন। ২০২২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসেন মোখলেছুর রহমান মুকুল। সাহিদুজ্জামান খোকন, মোখলেছুর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. একেএম শফিকুল আলম, ডাঃ নাজমুল হক সাগরসহ ১৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় দলীয় মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। বর্তমান এমপি মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন আলোচনা ছিল বেশ জোরোসোরে। তাছাড়া মোখলেছুর রহমান মুকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ও এমএ খালেকের নামও ছিল এলাকার মানুষের আলোচনায়। তবে চমকের মাধ্যমে মনোনয়ন পেলেন ডাঃ নাজমুল হক সাগর।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থীর হিড়িক:

মনোনয়নের নামের তালিকা প্রকাশের পর নৌকার পক্ষে মিষ্টি বিতরণ আর আনন্দ মিছিল করেন ডাঃ নাজমুল হক সাগরের কর্মী সমর্থকরা। তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার আশায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের কর্মী সমর্থকরাও মিষ্টি বিলিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনসহ আরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে।

 

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিহাসের পাতায়:

গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইতিহাসে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় জয়কারের একটি প্রচলন সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য ফিরে যেতে হবে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে নৌকার টিকিট পান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিচ্ছন্ন রাজীনিতিক হিসেবে পরিচিত হিসাব উদ্দীন। তবে মেনে নেননি নেতাকর্মীরা। তাদের চাপেই মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দীতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা টেলিভিশনকে নৌকা প্রতীক মনে করেই ভোট দিয়েছিলেন। যার বহিঃপ্রকাশ ভোটের ফলাফলে। বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গণিকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন মকবুল হোসেন। এ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। মকবুল হোসেন (টেলিভিশন) পেয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৮২০ ভোট, আব্দুল গণি (ধানের শীষ) ৩৩ হাজার ৮৬১ ভোট এবং হিসাব উদ্দীন (নৌকা) ১ হাজার ৭৭১ ভোট। জয়লাভের পর শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছরে তিনি অলিখিত দলীয় এমপি হিসেবেই ছিলেন।

 

জানা গেছে, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। এ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন নৌকা প্রতীক পেলেও বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণির কাছে পরাজিত হয়। জয়-পরাজয়ের ব্যবধা ছিল প্রায় ২০ হাজার ভোটের।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মকবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয় তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেককে। তবে তীব্র আন্দোলনের পর এমএ খালেকের বদলে মকবুল হোসেনকে নৌকার টিকিট দেয় আওয়ামী লীগ। তীব্র প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ এ নির্বাচনে মকবুল হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কাছে ২ হাজার ৪৮৯ ভোটে পরাজিত হন।

 

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এমএ খালেক। তবে এবার মনোনয়ন বদল হয়নি। শেষ পর্যন্ত মকবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমএ খালেকের নৌকার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে মাঠে নামেন। নির্বাচনে মকবুল হোসেন জয়লাভ করেন ১০ হাজার ২৮১ ভোটে।

 

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে আবারও ছিটকে পড়েন মকবুল হোসেন। এ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পরবর্তীতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এ নির্বাচেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন জয়লাভ করেন।

 

নেতাকর্মীরা বলছেন, মকবুল হোসেন দুই বার জয়লাভ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং দুইবার পরাজিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। এ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দীতা করতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা জানতে সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।

এবারের নির্বাচন অর্থাৎ আগামি৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে ইতিমধ্যে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জুয়েল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রিন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাবেক এমপি মকবুল হোসেনসহ আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলবেন বলে আলোচনা হচ্ছে।

 

নেতাকর্মীরা বলছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনকে দলের কোন পদ পদর্বীতে রাখা হয়নি। তাছাড়া তার বয়সও বেড়েছে। জীবনের শেষ নির্বাচন হিসেবেই তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার কয়েকজন কর্মী সমর্থক। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই বলে দলীয় প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে আরও কয়েকজন হতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এক্ষেত্রে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন, জমাদান ও প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে এবারের ভোটের প্রতিদ্বন্দীতার হিসাব-নিকাশের জন্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭