ইনসাইড পলিটিক্স

রওশনের পাশে কেন দাঁড়াল না আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 01/12/2023


Thumbnail

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। অবাধ, সুষ্ঠু হচ্ছে না। এই অর্থহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে না। এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়।এরপর শুরু হয় নাটক। সেই সময় আওয়ামী লীগের পাশে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তার নাম রওশন এরশাদ। রওশন এরশাদ এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন এবং রওশন এরশাদের অনুসারীরা এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টির আংশিক হলেও নির্বাচনে থেকেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর রওশন এরশাদ হয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা। 

এরশাদ ওই নির্বাচনকে পরে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সত্ত্বেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন রংপুর-৩ আসন থেকে। এবার নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং মতদ্বৈততা ছিল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছিলেন তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় আবার আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ান রওশন এরশাদ। তিনি নির্বাচনে তফসিলকে স্বাগত জানান এবং এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতিকেও তিনি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ গ্রহণের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। এরপর দল ভাঙার আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার কারণেই মূলত জিএম কাদের পন্থীরা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন এবং মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু এই মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে রওশন এরশাদ এবং তার অনুসারীরা কেউই অংশগ্রহণ করেননি। তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগও করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তাই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এমনকি তার অনুসারীরাও এবার নির্বাচনে অন্তত জাতীয় পার্টি থেকে অংশগ্রহণ করছেন না। এরকম বাস্তবতায় রওশন এরশাদের রাজনৈতিক অধ্যায়ের যবনিকা দেখছেন অনেকে। 

কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, রওশন এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়া এবং তার লোকজনকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে যে, শেষ মুহূর্তে জিএম কাদেরের সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা হয়ে যায় এবং সেই সমঝোতার একটি বড় শর্ত ছিল রওশন এরশাদকে কোনোরকম সমর্থন এবং সহানুভূতি না দেওয়া। জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে কণ্টকমুক্ত করার জন্যই সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে ছিলেন, যাতে রওশন এরশাদের প্রতি তাদের সহানুভূতি এবং সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়। সরকার জিএম কাদেরকে সেই সুযোগটা দিয়েছেন। এই নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের পন্থীরা জাতীয় পার্টিতে নিরঙ্কুশ হল। কিন্তু জিএম কাদের শেষ পর্যন্ত কি করবেন সেটি এখনও একটি বড় প্রশ্ন। কারণ ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যে যদি জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত পাল্টে দেয় কিংবা ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো ঘটনা ঘটায় তখন সরকার কি করবে? 

রওশন এরশাদকে পাশে রাখলে হয়তো সরকার এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ত না। তবে সরকারি মহলরা আশাবাদী যে, জিএম কাদের নির্বাচনে যাবেন। বিভিন্ন সরকারি সূত্রগুলো বলছে, জিএম কাদেরের সঙ্গে যারা আছেন তাদের অনেকেই সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, রওশন এরশাদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কারণে জিএম কাদের অন্য রকম আচরণ করছেন। কাজেই রওশন এরশাদকে যদি সমর্থন না দেয় আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে জিএম কাদের নির্বাচনে থাকবেন। এ রকম একটি আপসরফার মাধ্যমেই রওশন এরশাদের পাশে আর দাঁড়াননি সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের নির্বাচনে থাকবেন তো?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭