ইনসাইড বাংলাদেশ

আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ : হুমায়ুন আখতার


প্রকাশ: 02/12/2023


Thumbnail

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প। চলতি বছর দেশের ভেতর উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে আজকের ভূমিকম্পটিই সর্বোচ্চ মাত্রার। এমনকি গত ২০ বছরের মধ্যেই এটি সর্বোচ্চ। দেশের ভূমিকম্প গবেষকরা বলছেন, এর আগে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই রাঙ্গামাটির বরকোলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। 

আবহাওয় অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হওয়া ভূমিকম্পের প্রবল দুলুনিতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক মানুষ ঘর ছেড়ে সড়কে নেমে আসেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। 

৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া। এমন সময় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও। সারাদেশে মাঝে মধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেও এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা।

ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। উৎপত্তি ও মাত্রা বিবেচনায় আজকের ভূমিকম্পকে উদ্বেগজনক বলছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

২০১৬ সালে প্রকাশিত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি গোপন ফল্ট রয়েছে যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার মতো ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের কাছে। এটি হয়েছে সাবডাকশন জোনে। পৃথিবীব্যাপীই ভূমিকম্পের জন্য কুখ্যাত সাবডাকশন জোন।

একই জোনে আজকের স্থান থেকে আরো উত্তরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬-৭ মাস আগে ভূমিকম্প হয়েছে। সিলেটেও হয়েছে। এগুলো বড় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এটা কয়েক বছরের মধ্যেও হতে পারে বা আগামী ৫০ বছরের মধ্যেও হতে পারে।’ 

গত ২ বছরে হওয়া হালকা থেকে মাঝারি ভূমিকম্পগুলোর বেশিরভাগ সাবডাকশন জোনে হয়েছে বলে জানান হুমায়ুন আখতার।

তিনি বলেন, ‘সিলেট থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার পর্যন্ত জোনকে আমরা বলি সাবডাকশন জোন। সাবডাকশন বলতে একটা প্লেটের নিচে আরেকটা প্লেট তলিয়ে যাওয়া বোঝায়। আমাদের এখানে সাবডাকশন জোনে ইন্ডিয়ান প্লেট বার্মার প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওর, মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত আমরা যদি একটা কাল্পনিক রেখা টানি তাহলে এই বরাবর ইন্ডিয়ান প্লেট পূর্বের দিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।’ 

হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘২০১৬ সালে নেচার জিও সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় আমরা ১২ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি, যে পরিমাণ শক্তি সাবডাকশন জোনে জমা হয়ে আছে তা থেকে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে যেকোনো সময়। এই সঞ্চিত বিপুল শক্তি একবারেও বের হতে পারে, আবার আংশিকভাবে বারবারও হতে পারে। তবে পৃথিবীর সাবডাকশন জোনে যেসব ভূমিকম্প হয়ে থাকে সেগুলো সাধারণত ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ শক্তি একবারে বের হয়ে যায়। সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্পগুলো খুব ধংসাত্মক হয়ে থাকে। আমাদের সাবডাকশন জোন সক্রিয় এবং এখানে প্রচুর পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে। এই সঞ্চিত শক্তি কোনো না কোনো সময় বের হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’ 

বড় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির সময় এসেছে। বাংলাদেশের শহর ও অবকাঠামোগুলোকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভন নয়। তাই এই মুহূর্ত থেকেই মানুষকে ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং নিয়মিত মহড়ার আয়োজন করতে হবে।’

সুনামগঞ্জ, জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে যেভাবে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে এখানে ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭