ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদা জিয়ার মতোই আচরণ করলেন সাদেক খান


প্রকাশ: 02/12/2023


Thumbnail

২০১৫ সালের কথা মনে আছে? ওইসময় বেগম খালেদা জিয়া সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডেকেছিলেন। অবরোধ সফল করতে তিনি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। বলেছিলেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটবে তত ক্ষণ পর্যন্ত তিনি ঘরে ফিরবেন না। সেখানে নাওয়া খাওয়া এবং রাত্রিযাপনের ব্যবস্থাও করেছেন বেগম জিয়া। এই সময় আকস্মিকভাবে ঘটে দুর্ঘটনা। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার ছোট পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করেন। 

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবরণের পর শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন বেগম খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন মা। আর তাই মায়ের হৃদয়ের বেদনা তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন। এজন্য তিনি ছুটে গিয়েছিলেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। কোনোরকম প্রোটোকল বা নিরাপত্তার কোনো তোয়াক্কা করেননি তিনি। যদিও সেই সময় বিএনপি -জামায়াতের আন্দোলন চলছিল। বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে যাওয়াটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিরাপত্তার হুমকি। তারপরও সবকিছুকে কিছুকে উপেক্ষা করে মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রধানমন্ত্রীর আগমনের কথা শুনে গেট আটকে দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘক্ষণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। ভেতরে বিএনপির অনেক নেতাই উপস্থিত ছিলেন। যাদের মধ্যে প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, শিমুল বিশ্বাস অন্যতম। তারা কেউই দরজা খোলেননি। 

৪০ মিনিট বেগম খালেদা জিয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা না দিতে পেরে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘটনাটি অমানবিকতার এবং শালীনতা বিবর্জিত হিসেবে রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বীকৃত। এই ঘটনার পর সারা দেশে ধিক্কার পড়ে। একজন প্রধানমন্ত্রীকে ন্যূনতম সম্মান দেওয়ার যোগ্যতা যাদের নেই তারা কিভাবে আন্দোলন করতে চাই এবং রাজনীতি করে এই প্রশ্ন উঠেছিল দলমত নির্বিশেষে সকলের মধ্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ২০২৩ সালে ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করলেন আওয়ামী লীগের একজন এমপি। 

ঢাকা-১৩ আসনের বর্তমান এমপি সাদেক খান এবার মনোনয়ন পাননি। এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক। জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি উদারতার এক বড় নজির। ২০১৮ সালে মনোনয়ন না পেলেও তিনি সাদেক খানকে সহযোগিতা করেছিলেন। সারা দেশে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির পাশে থেকে তদারকি করেছিলেন। আর সে কারণেই তিনি পুরষ্কার পান। যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। এবার তিনি তার ত্যাগ এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পুরস্কার পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ওই একই আসন থেকে। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি প্রথম ছুটে গিয়েছিলেন সাদেক খানের বাসায়। তিনি একা নন, সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। দুজন সাদেক খানের বাসভবনে গেলে সাদেক খান খালেদা জিয়ার মতো এই কাণ্ড করেন। তিনি কোলাপসিবল গেট আটকে দেন। এমনকি ছোট গেটটিও বন্ধ করে দেন। 

এসময় ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন যে সাদেক খানকে বলেন, আমরা এসেছি। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। এই সময় গেটের দারোয়ান জানান যে সাদেক খান বাড়িতে নেই। এসময় উত্তরের সভাপতি বজলু বলেন যে, সাদিক খান সাহেব থাকার দরকার নেই। তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসবো। কিন্তু তখনও দারোয়ান গেইট খোলেনি। জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা উত্তরের সভাপতি প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসেন। আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য যখন খালেদা জিয়ার মতোই আচরণ করেন তখন তাকে কি বলবেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭