ইনসাইড বাংলাদেশ

‘যাঁর বুকে স্বাধীনতার লেশমাত্র নেই, তাঁকেই স্বাধীনতা পদক’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/03/2018


Thumbnail

বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ এই দুই সরকারের আমলেই দুটি রাষ্ট্রীয় পদক জিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন শাইখ সিরাজ। কৃষি সাংবাদিকতায় তিনি ১৯৯৫ সালে একুশে পদক পান এবং এ বছর স্বাধীনতা পদক পেলেন।

এ বছর প্রথমে ১৬ জনকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১২ জন,চিকিৎসা, সমাজসেবা,সাহিত্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাকী চার জন। পরে সংস্কৃতিতে আসাদুজ্জামান নূর এবং কৃষি সাংবাদিকতায় শাইখ সিরাজকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে ১৯৯৫ সালে শাইখ সিরাজকে কৃষি সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক তুলে দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের চারটি পর্বে জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। উপস্থাপক শাইখ সিরাজ খাল কাটার ফলে কৃষিতে যে বিপ্লব হয়েছে তা তুলে ধরে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। আর এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার নিলেন।

স্বাধীনতা পদক অনুষ্ঠান শেষে শাইখ সিরাজ বলেন, রাষ্ট্র সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। কখনো এক সরকার আসে এক সরকার যায়। এভাবেই হয় জিনিসগুলো।কিন্তু জনগণ তাঁর কাজের জন্য রাষ্ট্র তাঁকে পুরস্কৃত করে। উভয়ের কাছে হয়তো এই কাজের জন্য সমানভাবে সবার কাছে সমাদৃত। সেটা হয়ত বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

শাইখ সিরাজ ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কৃষি ভিত্তিক অনুষ্ঠান মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।

এই প্রসঙ্গে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, একই বছর কৃষি খাতের পুরস্কারটিকে খণ্ডিত করে তাকে বলা হলো খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি সাংবাদিকতায় পুরস্কার দেওয়া হলো। কৃষি সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেলেন শাইখ সিরাজ। বিশেষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার একজন শাইখ সিরাজ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আজ গর্বিত হওয়ার কথা একজন সাংবাদিক পুরস্কার পেলেন, কিন্তু আমরা হতে পারছি না একারণেই তাঁর (শাইখ সিরাজ) নিজের বক্তব্যেই। তাঁর বক্তব্যই ঔদ্ধত্যপূর্ণ। জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচিকে যিনি গ্লোরিফাই করেছেন। একইভাবে তিনি কৃষকের বঙ্গবন্ধু নামে অনুষ্ঠান করেছেন। পুরোটাই যে তাঁর মন থেকে নয়, দুটোই যে তোষামোদির উদ্দেশ্যে করা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাঁকে বিশেষভাবে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য না হলেও উভয় রাজনৈতিক দলকে সমভাবে তোষামোদ ও সন্তুষ্ট করতে পারার জন্য আমি তাঁকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন করতে চাই। জিয়াউর রহমানের খাল কাটা কর্মসূচি যদি গৌরবান্বিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু ও কৃষি একইভাবে কীভাবে গৌরবান্বিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, তিনি একটি কথা বলছিলেন যা আমার কাছে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনে হয়েছে, রাষ্ট্র তো রাষ্ট্র সরকার আসবে যাবে। কুখ্যাত ওয়ান ইলেভেনের সময় চ্যানেল আইতে স্ক্রল চলছিল এভাবে, কৃষি ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। সেখানেও তাঁর লবিং চলছিল। এই যে লবিং করার মাধ্যমে এই পুরস্কারগুলো গ্রহণ করা, আমি নিশ্চিত, শাইখ সিরাজের মুখ থেকে কোনোদিন বঙ্গবন্ধু, কোনোদিন স্বাধীনতার চেতনা আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগ পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধু বলেছেন কিনা। চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে যাঁরা আছেন তাঁদের প্রশ্ন করেন, সাগর ভাইয়ের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। শাইখ সিরাজের দায়িত্ব হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। এটা ডিক্লেয়ারড, তাঁরা অস্বীকারও করেনা। সবচেয়ে দু:খ লাগে এখানে বাংলাদেশে তারেক রহমান একজন কনভিকটেড আসামি, কদিন আগেই লন্ডনে চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে তারেক রহমানকে দেশনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার দায়িত্ব শাইখ সিরাজের। সেটি চ্যানেল আই লন্ডন লাইভ প্রচার করে। একজন দাগী আসামিকে দেশনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করার পর কেন কমিটি এই ভদ্রলোককে (শাইখ সিরাজ) স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য মনোনীয়ত করল। আপনি তাঁকে (শাইখ সিরাজকে) সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেন আমার কোনো দু:খ নেই, কিন্তু তাঁকে স্বাধীনতা পদক। স্বাধীনতা যার বুকের মধ্যে চিহ্নমাত্র নেই, বঙ্গবন্ধু যাঁরা চেতনায় চিহ্নমাত্র নাই, তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এভাবে ভুলন্ঠিত করলে বাংলার অসংখ্য মানুষের বুকে কষ্ট লাগে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সিপিডি এবং চ্যানেল আই মিলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন নামে সারাদেশে ঘুরে বলল, বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিবিদ ভালো না। একটা বিরাজনীতিকরণের ক্ষেত্র তৈরি করে, তার খেসারত হিসেবে, তাঁকে ২১ পদক দেওয়া খালেদা জিয়াকে জেল খাটতে হয়, এবং যিনি স্বাধীনতা পুরস্কার দিলেন তাঁকেও বন্দী থাকতে হয়। এমন অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী মানুষ, তারপরও কোনো সরকারের কমিটিই তাঁকে পুরস্কার দিতে ভুল করে নাই। চ্যানেল আইয়ের যে কাউকে জিঙ্গেস করেন বলবে রাত ১২ টার পরে শাইখ সিরাজের আওয়ার সেখানে সরকারের বিষোদগার করাই হচ্ছে মূল কাজ।


বাংলা ইনসাইডার/ এএফ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭