ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলের শরিকরা কেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না?


প্রকাশ: 05/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল গঠিত হয়েছিল ২০০১ সালের পর। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যখন ভুলুণ্ঠিত হয়েছিল, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা লাগানো হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীরা যখন মন্ত্রী হয়েছিল, সারা দেশে শুরু হয়েছিল সংখ্যালঘু নিপীড়ন তাণ্ডব ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে, তাদের সমন্বয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল। এই জোটের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় রাজনীতি বিকশিত করা। আর এই ১৪ দলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সেই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল এবং এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে এক-এগারো সরকার আসছে এবং তখনও ১৪ দল অখন্ড ছিল। 

২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দল ছাড়াও মহাজোট গঠন করে। এটিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী জোট বলে। যে মহাজোটের অন্যতম অংশীদার ছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু নির্বাচনের পরে জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের শরিকদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসভা গঠন করেছিল। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল প্রায় ১৫ বছর আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকরা ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যে দুই মেয়াদে ১৪ দলের শরিক দলগুলো মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেয়েছে, জাসদের ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দলের নেতারা মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও ১৪ দলের শরিক দলগুলো এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক ভাবে বিকশিত হয়নি। রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত হয়নি। এমনকি তারা ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। এই ১৫ বছরের মধ্যে জাসদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টিতে ভাঙন হয়েছে। সাম্যবাদী দলেও ভাঙন হয়েছে। দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ নিম্নমুখী। এক নেতা এক দলে পরিণত হয়েছে এই রাজনৈতিক দলগুলো। 

জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর বাইরে আরও দু চারজন নেতা আছেন। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টি বা সাম্যবাদী দলের সেই অবস্থাও নেই৷ ওয়ার্কার্স পার্টি মহিলা মনোনয়নে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়ে রীতিমতো পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছে। এখন যখন নির্বাচনের সময় আসছে তখন তারা আসন ভাগাভাগিতে হিস্যা চায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজের পরিচয় আত্মনির্ভরশীল হয়ে দাঁড়াতে পারছে না কেন? এই প্রশ্নটি শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়, এই প্রশ্নটি জনগণেরও। 

১৫ বছর দুধেভাতে থাকার পরও শরিক দলগুলো কেন বিকশিত হতে পারছেন না? সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে না সেটি রাজনীতিতে একটি বড় গোলকধাঁধা। বিশেষ করে অন্য সময় বলা যেতে পারত যে, বাম দলগুলো নিপীড়িত হয়, নির্যাতিত হয়, তারা দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু এখন যখন ক্ষমতার সঙ্গে তারা আছে, আর্থিক অবস্থাও তাদের সকলের স্ফীত সেই সময় শরিক দলগুলো এত ম্লান এবং ম্রিয়মাণ কেন। একজন দুজন ছাড়া কোন নেতা নেই যে নেতারা জাতীয়ভাবে পরিচিত। এমন কোন ব্যক্তি নেই যারা নিজ যোগ্যতায় নিজ প্রতীকে নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল না। অতীতে এই ওয়ার্কার্স পার্টি বা কিংবা জাসদ অনেক শক্তিশালী ছিল। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সুবিধাবাদী রাজনীতির দিকে তাদের নজর, আদর্শহীনতা এবং গন্তব্যহীন রাজনীতির কারণেই তাদের এই ক্ষীয়মান অবস্থা। আর এই কারণেই তারা যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির জন্য দেনদরবার করবে সেই মুখটুকুও তাদের নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭