ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে নিয়ে ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন প্রণব মুখার্জি


প্রকাশ: 06/12/2023


Thumbnail

বাবা প্রণব মুখার্জির স্মৃতিচারণ করে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি একটি বই লিখেছেন। ‘ইন প্রণব, মাই ফাদার: এ ডটার্স রিমেমবার্স’ নামক বইটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তার এই বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন প্রণব মুখার্জির নানা অজানা তথ্য। সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়া পর যখন গুঞ্জন শুরু হয় তাহলে কে হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী- সেই সময়ে প্রণব মুখার্জিকে এই প্রশ্ন করেন শর্মিষ্ঠা। বইটিতে এ সংক্রান্ত তথ্যও উঠে এসেছে।

প্রকাশিতব্য এ বইয়ে শর্মিষ্ঠা, বাবা প্রণব মুখার্জির বর্ণাঢ্য জীবনের অংশবিশেষ তুলে ধরেছেন। শর্মিষ্ঠার কথায়, প্রধানমন্ত্রী না করায় সোনিয়া গান্ধীর প্রতি কোনো ক্ষোভ ছিল না তার বাবার। তখন প্রধানমন্ত্রী হওয়া মনমোহন সিংকে নিয়েও প্রণব মুখার্জির কোনো ঈর্ষাও ছিল না।

এ বইয়ে উঠে এসেছে, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একক গরিষ্ঠতা পাওয়া দল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেস ছাড়াও অংশীদার জোটের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল। কিন্তু সোনিয়া এই পদে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সোনিয়ার এই সিদ্ধান্ত নিজ দলের নেতাকর্মীসহ ভারতের সব মানুষকে অবাক করে দিয়েছিল।

বইটির মধ্যে ‘দ্য পিএম ইন্ডিয়া নেভার হ্যাড’ শিরোনামের অধ্যায়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে সোনিয়ার ঐ সিদ্ধান্তের পরে গণমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।

তিনি আরও লিখেছেন, ড. মনমোহন সিং এবং প্রণবের নাম এই পদের জন্য শীর্ষ প্রতিযোগী হিসেবে আলোচনায়। বাবা প্রচুর ব্যস্ত থাকায় কয়েক দিন তার সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমি তার সঙ্গে ফোনে কথা বলি।

উচ্ছ্বসিতভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করেছি- তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কিনা। তার জবাব ছিল, না, ‘তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী করবেন না। মনমোহন সিং হবেন।‘

তবে ১৯ মে ডায়েরিতে প্রণবকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যায়। প্রণব লিখেছেন, সমস্যার সমাধান হয়েছে। মনমোহন সিং হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। মনমোহন ও সোনিয়া প্রেসিডেটের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। প্রেসিডেন্ট মনমোহনকে সরকারগঠনের অনুমতি দিয়েছেন।

শর্মিষ্ঠা মুখার্জি উল্লেখ করেছেন, যদিও সেই সময়ে তার বাবা আর কিছু লেখেননি, ৩১ ডিসেম্বর বছরের বড় ঘটনাগুলো বর্ণনা করার সময় তিনি লিখেছেন, সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ছিল প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে সোনিয়া গান্ধীর আশ্চর্যজনক আত্মত্যাগ। দলের ভেতরে এবং বাইরের চাপ সত্ত্বেও তিনি রাজি হননি। তার এই সিদ্ধান্ত বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে তিক্ত সংঘাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, তার বাবা সোনিয়া গান্ধীকে মনে করতেন বুদ্ধিমতি, পরিশ্রমী এবং শিখতে আগ্রহী একজন ব্যক্তি হিসেবে।

এর আগে প্রণব মুখার্জির একটি ডায়রিতে রাহুল গান্ধীর ব্যাপারেও কিছু কিছু লেখা পাওয়া যায়। ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির (সিডব্লিউসি) বৈঠকের আলোচনা নিয়ে লিখেছেন। সেই বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল একই বছরের আসন্ন লোকসভার নির্বাচন। 

রাহুল গান্ধী মাঝে মধ্যে দেখা করতে যেত বলে ডায়রিতে লিখেছেন প্রণব। শর্মিষ্ঠার ভাষ্য, রাহুল গান্ধীকে ‘খুবই বিনয়ী’ ও ‘কৌতূহলী’ মনে করতেন প্রণব। কিন্ত তার মত ছিল, রাহুলের মধ্যে এখনো রাজনৈতিক পরিপক্বতা আসেনি।

রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করতে গেলে প্রণব রাহুলকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিতেন, যাতে তিনি সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পান। শর্মিষ্ঠা লিখেছেন, রাহুল যে এ পরামর্শ কানে তোলেননি আমরা সবাই সেটা জানি।

২০১৩ সালের ২৫ মার্চ রাহুল তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রণব লিখেছেন, বহু বিষয় নিয়ে রাহুল আগ্রহী। কিন্ত খুবই দ্রুত সে একটা বিষয় ছেড়ে আরেকটা বিষয়ে চলে যায়। আমি জানি না সে আসলে কতটা শোনে ও সে কথা বা পরামর্শ নিজের মধ্যে ধারণের চেষ্টা করে।

প্রসঙ্গত, প্রণব মুখার্জি একসময় ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে দেশটির পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সবশেষ তিনি ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট ৮৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭