এডিটর’স মাইন্ড

১০ ডিসেম্বর ঘিরে ‘ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক’


প্রকাশ: 06/12/2023


Thumbnail

আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কি হতে পারে বাংলাদেশের ওপর তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলাপ আলোচনা। যদিও সরকার প্রকাশ্যে বলছে, ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কিছু আরোপ করবে না। কিন্তু কূটনীতিকপাড়ায় এ  নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছে। নির্বাচনের ব্যাপারে একই কথা বারবার বলছে। আবার অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ আক্রান্ত হতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এক ধরনের আঘাতের পূর্বাভাস বলে অনেকে মনে করছেন। সেগুনবাগিচার কূটনীতিক পাড়ায় এ নিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক বিরাজ করছে। 

অনেকে মনে করছেন, যদি আকস্মিক ভাবে এরকম কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোন কিছু আরোপ করা হয় তাহলে সেটি আমাদের নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই রকম আতঙ্কের প্রধান কারণ হল ২০২১ সালের অভিজ্ঞতা। ওই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে কেউই কোন কিছু জানতেন না। এটিকে অনেকেই বাংলাদেশের কূটনীতির একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করেন। ঠিক একই রকমভাবে এবারও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাহলে এটি সরকারের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বাংলাদেশ ওয়াশিংটনের দিকে খোঁজখবর রাখছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে, এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ থাকুক না থাকুক এটি নিয়ে যে সরকারের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে তা খুব স্পষ্ট। কারণ এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এই সময়টা যদি নির্বাচনের আগে না হত তাহলে হয়তো সরকার এটিকে আমলে নিত না।

বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ভারতের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাক গলাচ্ছে না এবং নির্বাচনের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছে, সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিতে পারে এবং সেই কৌশলের অংশ হিসাবে মানবাধিকার দিবসে কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কিছু আরোপ করে কি না সেটি নিয়ে কেউ কেউ চিন্তিত এবং এটি কূটনীতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। 

মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আসন্ন রিপোর্ট সেখানে দুটি বিষয় থেকে পর্যবেক্ষক মহল নজর রাখবে। প্রথমত, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কি অবস্থান থাকে সেটি দেখার। কারণ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কতটুকু উন্নত হল সে সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কি তা জানা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবাধিকার রিপোর্টে।

দ্বিতীয়ত, এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে যদি কোন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কিনা সেটা দেখার বিষয়। যদি মানবাধিকার সম্পর্কে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয় তাহলে সেটিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল। তারা মনে করেন যে প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ব্যাপারে সবসময় নেতিবাচক মন্তব্যই থাকে এবং এটি তাদের একটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল না কেন মানবাধিকার রিপোর্টে কারোরই প্রশংসা করা হয়নি। যদিও এই মানবাধিকার রিপোর্টের কদিন আগে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের ওপর যে মার্কিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ১০ ডিসেম্বরে মার্কিন রিপোর্টে কি থাকে? তবে এটি ইতোমধ্যে একটি ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক তৈরি করেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭