ইনসাইড পলিটিক্স

শাহজাহান ওমরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভ্রান্তি, বিরক্তি এবং হতাশা


প্রকাশ: 06/12/2023


Thumbnail

শাহজাহান ওমরের আওয়ামী লীগে যোগদান ছিল এবছরের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর একটি। তিনি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা মামলার অন্যতম আসামী। কারাগারে থেকে তিনি সরকারের সাথে দেন দরবার করেছেন, আপস সমঝোতা করেছেন। আর কারাগার থেকে মুক্তির একদিন পরেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে নৌকা প্রতীক নিয়েছেন এবং নৌকা প্রতীকে তিনি এখন নির্বাচন করছেন। এরকম ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথম নয়। এর আগেও বহু রাজনৈতিক নেতার এরকম ডিগবাজির ঘটনা বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল অন্য বিরোধী দলকে দুর্বল করতে, বিরোধী দল থেকে নেতাদের ভাগিয়ে নিয়ে এসে, নানারকম প্রলোভন দিয়ে তাদেরকে দলে ভিড়িয়ে একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ জয় করতে চায়। শাহজাহান ওমর সেরকম যুদ্ধেরই একটি ব্যবহারযোগ্য পণ্য। কিন্তু শাহজাহান ওমর যোগদানের পর একের পর এক যে সমস্ত কাণ্ডকারখানা করছেন তাতে আওয়ামী লীগের লোকজন অনেকেই বিরক্ত। কেউ কেউ বিভ্রান্ত, কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করছেন। 

শাহজাহান ওমর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তার নির্বাচনী এলাকায় যে সমাবেশ করেছেন সেখানে একজনকে বন্দুক হাতে দেখা গেছে। যদিও শাহজাহান ওমর পরে দাবি করেছেন যে এটি তার লাইসেন্স করা অস্ত্র। কিন্তু এই লাইসেন্স করা অস্ত্র এভাবে প্রকাশ্যে প্রদর্শনের কোন দরকার ছিল? এটি কি কোন রাজনীতিবিদের শিষ্টাচার সুলভ আচরণ? এই প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখন আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চাইছে, আন্তর্জাতিক মহল যখন এই নির্বাচনের ওপর কড়া নজরদারি রাখছে ঠিক সেই সময় শাহজাহান ওমরের এই বন্দুক বিলাস জাতিকে হতবাক করেছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এই নিয়ে বিরক্ত। 

এখানেই শুধু শেষ নয়, শাহজাহান ওমর গতকাল নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন এবং নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার পর যখন গণমাধ্যমের কর্মীরা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে, তখন তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং এই সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যান। পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন। এই সংস্কৃতি আওয়ামী লীগের সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বাইরে। বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামাতের সংস্কৃতির একটি অংশ। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সাংবাদিক বান্ধব, তিনি যেকোন বিদেশ সফরের পর গণমাধ্যমের কর্মীদেরকে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান এবং সেখানে খোলামেলাভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। আর অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা সব সময় বন্ধ থাকত। তিনি কখনোই সংবাদ সম্মেলন করতেন না। সংবাদ সম্মেলন করলেও কোন প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। সেই সংস্কৃতির লালনকারী শাহজাহান ওমর এখন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আমদানি হয়ে বিএনপির সেই সাংবাদিকদের প্রতি ঔদ্ধত্য এবং সাংবাদিকদের প্রতি বিরক্তির সংস্কৃতিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে চালু করতে চাইছেন? 

শুধু তাই নয়, আজ তিনি সুপ্রিম কোর্টে গেছেন এবং সেখানে তিনি বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যেয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সাথে বিরোধে জড়ানো এই সময় কি খুব জরুরি বিষয় ছিল নাকি তিনি ব্যক্তিগত ক্ষোভ এবং প্রতিহিংসা পূরণের জন্য এখন সরকারকে ব্যবহার করছেন? এখান থেকে তিনি গেছেন ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ করেছেন। এই সমস্ত ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকে একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, শাহজাহান ওমরকে দলে নেওয়ার কারণ কি? কি কারণে তার আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়াটা জরুরি ছিল তা তারা বুঝতে পারছেন না এবং এখন তার কার্যক্রমে তারা বিরক্ত। আর শাহজাহান ওমরের মতো লোকেরা যারা একাধিক অগ্নিসন্ত্রাস সহ বিভিন্ন মামলার আসামী, তারা যখন এ ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন আওয়ামী লীগের অনেকে হতাশও বটে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭