ইনসাইড পলিটিক্স

বরিশালে সাদিককে ঠেকানোর লড়াইয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ


প্রকাশ: 07/12/2023


Thumbnail

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে বর্তমান সংসদ-সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে সদ্য সাবেক বিসিসি মেয়র সাদিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে ঠেকাতে জাহিদ ফারুক মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সাদিকের মনোনয়নপত্র বাতিলে দফায় দফায় অভিযোগ করা হচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে সাদিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন জাহিদ ফারুক এমপি।

হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ করে সাদিকের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ। একই দিনে বরিশালেও সাদিকের বিরুদ্ধে জাহিদের মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কেবিএস আহম্মেদ কবির অভিযোগ করেছেন। মনোনয়নপত্র বাতিলে এভাবে একের পর এক অভিযোগ জাহিদ ফারুকের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলে দাবি করেছেন সাদিকপন্থি নেতারা। তারা বলছেন, জনসমর্থন নেই বলে ভোটের মাঠে লড়তে জাহিদ ভয় পাচ্ছেন। অপরদিকে সাদিক আবদুল্লাহকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আখ্যা দিয়ে জাহিদ অনুসারীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ডামি প্রার্থীর কথা। সেখানে সাদিক তো পুরোদস্তুর নির্বাচন করতে নেমেছেন। আইন ভঙ্গ করায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হবে-এটাই তো স্বাভাবিক।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সাদিকের মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে বরিশাল-৫ আসনে নির্বাচনের পরিবেশ জমে উঠেছে। চায়ের টেবিলে এটি আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। কে এগিয়ে-তাই নিয়ে বিচারবিশ্লেষণ চলছে। অবশ্য এর কারণও রয়েছে। সাদিক মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ৩০ ওয়ার্ডে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই তার পক্ষে। সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সাদিকের অনুসারী। ফলে নির্বাচনে সাদিক বড় ফ্যাক্টর। সর্বত্রই এখন আলোচনা জাহিদ-সাদিকের যুদ্ধ।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্যসচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বহুদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন থেকে সবাই বঞ্চিত।তাই সাদিক প্রার্থী হওয়ায় এত আগ্রহ। ভোটটা এবার সত্যিকারের ভোটের মতো হবে ভাবছে সবাই। এ কারণে সাদিকের মনোনয়নপত্র বাতিলে জাহিদ ফারুক মাঠে নামেন। ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং দপ্তরে সাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন জাহিদের অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। যুক্তরাষ্ট্রে সাদিকের স্ত্রীর বাড়ি আছে এবং সেই তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি-দাবি করে মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি জানানো হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত অভিযোগ টেকেনি। তথ্যপ্রমাণ ও লিখিত অভিযোগ না থাকায় সাদিকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এদিকে বুধবার ঢাকায় নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে সাদিকের মনোনয়নপত্র বাতিলের আপিল করেছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

সাদিকের মনোনয়নপত্র বাতিলে জাহিদ ফারুক কেন মরিয়া জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জানান, সাদিক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। কারণ, দলীয় সভাপতি বলেছিলেন ডামি প্রার্থী হতে। কিন্তু সাদিক যেভাবে নির্বাচনে নেমেছেন তাতে তাকে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া অন্য কিছুই বলা যাবে না। এছাড়া এতে দলের অভ্যন্তরে সংঘাত-সহিংসতা হতে পারে। সাদিক না থাকলে ভোট কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বা সেই ভোটে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী হবে বা না হবে-সেটা তো বিষয় না। তিনি (সাদিক) দলের নির্দেশনা অমান্য করেছেন।

জাহিদপন্থিদের বক্তব্যকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলে দাবি সাদিক অনুসারীদের। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও বিসিসি কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় করাচিতে থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করা কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ইতিহাস কারও অজানা নয়? ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলা গভর্নর হওয়ার উদ্দেশে বরিশালে আসা জাহিদ ফারুক কোন কোঠায় নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। ২০১৮ সালে ভোট করেছেন সাদিকের কর্মীবাহিনী দিয়ে। আর এখন ভর করেছেন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের ওপর।

লিটু আরও বলেন, আমার প্রশ্ন হলো-তার (জাহিদ) কর্মী-সমর্থক কোথায়? সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার মতো জনসমর্থন নেই বলেই তার মনোনয়নপত্র বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। হেরে যাওয়ার ভয় না থাকলে তো তিনি (জাহিদ) পাত্তাই দিতেন না।

অভিযোগের বিষয়ে সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমেরিকার নাগরিকত্ব ছেড়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমেছি। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, এর একটিও সত্য নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। তাই জাহিদ ফারুক সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করব না। এ ব্যাপারে জানতে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পাঠানো খুদে বার্তারও তিনি জবাব দেননি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭