ইনসাইড গ্রাউন্ড

মুশফিকের ‘বিচিত্র’ আউট এবং তার সঙ্গীরা


প্রকাশ: 07/12/2023


Thumbnail

কোনও রেকর্ডের অংশীদ্বার হলে তা গর্বের। সব খেলোয়াড়ই চান তার ব্যক্তি রেকর্ড নিয়ে চর্চা হোক যুগের পর যুগ। এটাই যেন খেলোয়াড়ি জীবনের স্বার্থকতা। মুশফিকুর রহিমেরও এমন কিছু রেকর্ড আছে যা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সেরা। কিন্তু, ৬ ডিসেম্বর মিরপুরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে রেকর্ড গড়েছে তা হয়তো ক্রিকেটের বাইবেলে লেখা থাকবে আজীবন। তিনি যেভাবে আউট হয়েছেন সেভাবে সচরাচর কেউ আউট হন না। মুশফিক হ্যান্ডেলড দ্যা বল আউট হয়েছেন। অবশ্য এই আউটের ধরনের নামটি পরিবর্তন হয়েছে ২০১৭ সালে। এখন এই আউটকে বলতে হবে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট। এর ফলে ক্রিকেটের আউট দশটি থেকে নেমে আসে নয়টিতে।

এখন আসি কি করেছিলেন মুশফিক? মুশফিকের বিরলতম আউটের ঘটনাটি বাংলাদেশের ইনিংসের ৪১তম ওভারে ঘটে। নিউজিল্যান্ড পেসার কাইল জেমিসনের ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাকফুটে খেলেছিলেন মুশফিকুর। বল ব্যাটে লেগে মাটিতে পড়ে, কিছুটা বাউন্স করে, স্টাম্প থেকে দূরে থাকলেও কিছু একটা ভেবে মুশফিক ডান হাত বাড়িয়ে বলটি ধরে নেন। সঙ্গে সঙ্গেই আউটের আবেদন করে কিউইরা। টিভি আম্পায়ার এহসান রাজার কাছে সাহায্য চান অনফিল্ড আম্পায়ার পল রাইফেল ও রোড টাকার। পাক আম্পায়ার এহসান টিভি-তে রিপ্লে দেখেই জানিয়ে দেন যে, মুশফিকুরকে ফিরতে হবে। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে আগেও এক দফায় হাত দিয়ে এভাবে বল সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু সেবার বলে তার হাত লাগেনি। দ্বিতীয় দফায় আর পার পাননি।

তবে ‘হ্যান্ডলড দা বল আউটের বেশির ভাগ নজিরের সঙ্গে মুশফিকের আউট একটু আলাদা। অনেক সময়ই বল স্টাম্পে আসতে থাকলে বা স্টাম্পের আশেপাশে ব্যাটসম্যান অবচেতনভাবেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফেলেন। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে স্টাম্পের ধারেকাছে ছিল না বল। স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে রক্ষণাত্মক শট খেলেন তিনি। বল চলে যাচ্ছিল আরও বাইরে। তার পরও হাত দিয়ে বল সরিয়ে দেন তিনি।

২০০১ সালে ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহর আউটের সঙ্গে মুশফিকের এই আউটের দারুণ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

মুশফিকের এই বিচিত্র আউট হবার সময় ধারাভাষ্যে ছিলেন মুশফিকের দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ধারাভাষ্যে এ দিন অভিষেক হলো বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যানের। মুশফিকের আউটের ধরনে বিস্মিত তামিম বলেন, ‘৮০টির বেশি টেস্ট খেলা একজন ক্রিকেটারের বোঝা উচিত ছিল যে, এরকম কিছু তিনি করতে পারেন না।

মুশফিকের মতো একজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কিভাবে এই কাণ্ড ঘটাতে পারেন? তিনিতো ক্রিকেটের সব নিয়ম-কানুন ভালো করেই জানেন। সতীর্থ হিসেবে তামিম এর ব্যাখ্যা দেবারও চেষ্টা করেন ধারাভাষ্যে।

তিনি বলেন, অনুশীলনের অভ্যাসের কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে। নেটে ব্যাটিংয়ের সময় সাধারণত ডিফেন্স করেই ব্যাটসম্যানরা বল ধরে বোলারের কাছে ফেরত পাঠায়। হতে পারে, মুশফিকের অবচেতন মন সেভাবেই কাজ করেছে এবং হাত বাড়িয়ে ফেলেছে সে। তবে এটা অবশ্যই কোনো অজুহাত হতে পারে না।

ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এই সাকিব কতৃক আপিলে ম্যাথুউজকে টাইম আউট হতে হলো। এই দৃশ্য ক্রিকেট বিশ্ব প্রথমবারের মতো দেখেছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতে এবার মুশফিক করে বসলেন আরেক কাণ্ড। 

টাইমড আউট-এর মতো বিরল আউট অবশ্য এটি নয়। টেস্ট ক্রিকেটে ‘হ্যান্ডলড দা বল আউট আগেও হয়েছেন ৭ ব্যাটসম্যান। সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে এই আউট হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল এনডিন। সবশেষ ২০০১ সালে এভাবে আউট হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মাইকেল ভন। এছাড়া ওয়ানডেতে ‘হ্যান্ডলড দা বল আউট হয়েছেন তিন ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে কেউ হননি।

এছাড়া আগে ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড আউটও হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ জন। বদলে যাওয়া আইনে যেহেতু দুটিই ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড, এই আউটের শিকার এখন মোট ২৩ জন।

তবে মুশফিক রেকর্ড বইয়ে নাম লেখালেন বাংলাদেশের প্রথম হিসেবে। এমন ইতিহাস গড়তে নিশ্চয়ই তিনি চাননি!

ক্রিকেটে ব্যতিক্রমী আউটের তালিকায় `হ্যান্ডলড্ দ্য বল` এখন আর নেই। ২০১৭ সালে বদলে যাওয়া আইনে এখন হাত দিয়ে বলার ধরার অপরাধে কেউ আউট হলে লেখা হবে `অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড` আউট হিসেবে। ওই সাতজন তাই টেস্ট ইতিহাসে আলাদা হয়েই থাকবেন। ওই সাতজন, যাঁরা হাত দিয়ে বল ধরার অপরাধে আউট হয়েছিলেন।

রাসেল এনডিন, অ্যান্ড্রু হিলডিচ, মহসিন খান, ডেসমন্ড হেইন্স, গ্রাহাম গুচ, স্টিভ ওয়াহ ও মাইকেল ভন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭