ইনসাইড বাংলাদেশ

১০ ডিসেম্বর: কী থাকছে মানবাধিকার রিপোর্টে


প্রকাশ: 07/12/2023


Thumbnail

১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এই মানবাধিকার দিবস উদযাপিত হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবার মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে। বাংলাদেশ যখন এই মানবাধিকার দিবস উদযাপন করবে, ঠিক সেই সময় নীতি নির্ধারক মহল, কূটনৈতিক মহলে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে।

প্রতি বছরই মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি তাঁদের মতো করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এবং মতামত দেয়। এই মানবাধিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা কোন কোন দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ২০২১ সাল থেকে এই মানবাধিকার রিপোর্টের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহ বেড়েছে। এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার রিপোর্ট দিয়ে থাকে এবং সেখানে বাংলাদেশের একটা চ্যাপ্টার থাকত। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকারের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটত। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, মানবাধিকার নিয়ে ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো এই রিপোর্টে জায়গা পেত। কিন্তু ২০২১ সালের মানবাধিকার রিপোর্ট ছিল বাংলাদেশের জন্য একটা বজ্রাঘাতের মতো। ওই রিপোর্টে র‌্যাবের সাতজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রেজারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে একদিকে যেমন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার যোগ্যতা হারান, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কোনও সম্পত্তি থাকলে সেটা বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে মানবাধিকার রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের একটি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থাকে ৷ ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে মানবাধিকার রিপোর্ট দিয়েছিল সেই মানবাধিকার রিপোর্টে অবশ্য কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বা ট্রেজারী স্যাংশন জারি করা হয়নি। তবে ওই রিপোর্টে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল। বিশেষ করে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার না দেওয়া, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বিরোধী দলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে ওই মানবাধিকার রিপোর্টে তিনটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার ছিল। প্রথমত, ওই মানবাধিকার রিপোর্টে ২০১৮ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল। সেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করেছিল। দ্বিতীয়ত, ওই রিপোর্টে জামায়াতের ব্যাপারে একটা সহানুভূতি দেখানো হয়েছিল। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং তাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়না, এই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ হয়েছিল। তৃতীয়ত, খালেদা জিয়ার বিচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্ন তুলেছিল।

এবারের মানবধিকারের রিপোর্টটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময় দিচ্ছে যখন বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনে দ্বারপ্রান্তে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। অর্থাৎ নির্বাচনের এক মাসেরও কম সময় আগে মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এই রিপোর্টে যদি নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে বুঝতে হবে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত কারণে নীরবতা অবলম্বন করছে।

উল্লেখ্য যে, গত দুই বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কথা বলছিল। সব দল যেন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে জনমতের যেন প্রতিফলন ঘটে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একাধিক মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশ সফর করছেন। এবং এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল এবং সেই ভিসা নীতি গত সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল।

তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয় নিয়ে চুপচাপ হয়ে যায়। এখন দেখার বিষয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন বা মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী ধরনের অবস্থান ব্যক্ত করা হয়। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে, কিন্তু কোনও নিষেধাজ্ঞা না দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে এই নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনও নেতিবাচক অবস্থান নেই। বরং  ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন অবস্থানে আছে। আর যদি ১০ ডিসেম্বর এ মানবাধিকার রিপোর্টে কারো উপর স্যাংশন নিষেধাজ্ঞা বা ভিসা রহিত করনের ঘোষণা দেওয়া হয়। তাহলে বুঝতে হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ইস্যুটি আসলে রাজনৈতিক হাতিয়ার। আগামী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থানকে, তাদের ক্ষোভকে জানান দেওয়ার জন্যই তাঁরা এই রিপোর্টটি দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয় মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে কী থাকে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭