ইনসাইড বাংলাদেশ

কী হচ্ছে পোশাক খাতে?


প্রকাশ: 07/12/2023


Thumbnail

গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিখাত পোশাক শিল্প নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। একাধিক কারণে এই আতঙ্ক এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তার ক্রয় শর্তে বলেছে, কোনও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা ক্রয়াদেশ দেওয়া পোশাকের দায় নেবে না। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের এই নতুন শর্ত আতঙ্ক তৈরি করেছে, দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে। এই শর্তের নানা রকম ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে এবং এই শর্তের তাৎপর্য নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি শর্ত দিয়েছে ঋণপত্রের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে এখন গার্মেন্টস মালিকরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করছেন । 

রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ মনে করছেন যে, এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। এ বিষয়টি সকলের জন্যই প্রয়োগ হতে পারে। কিন্তু গত একমাসের বেশি সময় ধরেই পোশাক খাত নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার যে নতুন শ্রমনীতির ডিক্রি জারি করেছেন, সেই শ্রমনীতিতে বাংলাদেশ আক্রান্ত হতে পারে; এমন একটি আশঙ্কার কথা গুঞ্জরিত হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ডিক্রি সংক্রান্ত বিষয়টি যখন ব্রিফিংয়ে জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন, তখন বাংলাদেশের গার্মেন্টসকর্মী কল্পনা আক্তারের কথাটি বলা হয়েছিল। এর ফলে এই শ্রমনীতির কারণে বাংলাদেশ আক্রান্ত হতে পারে, এমন কথা বিভিন্ন মহলে বলা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মিনিস্টার কমার্স এক চিঠিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আগাম সতর্ক করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শ্রমনীতি বাংলাদেশের গার্মেন্টস এর জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে। এবং, এর ফলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। 

যদিও পরবর্তীতে বাণিজ্য সচিব এই ধরনের সংকটের কথা নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ মার্কিন শ্রমনীতি লঙ্ঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। তবে বাণিজ্য সচিব যাই বলুন না কেন, এটি নিয়ে যে গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটি নতুন করে বলার নয়।

এর মধ্যেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে মার্কিন শ্রমনীতি এবং বাংলাদেশের শ্রম আইনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়। ওই বৈঠকের পরপরই পররাষ্ট্র সচিব বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। তবে, বাংলাদেশ যে মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতির শ্রম আইনের সংশোধনী স্বাক্ষর না করার মধ্য দিয়ে। জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে সংশোধিত শ্রম আইনটি পাস হয়েছিল। যে আইনে শ্রমিকদের কিছু কিছু অধিকার নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সংসদে পাশ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে আইনটি যায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য। কিন্তু, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনটিতে স্বাক্ষর না করে ফেরত পাঠিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই এটি স্বাক্ষর করেননি। এই শ্রম আইন পাশ হলে মার্কিন শ্রমনীতির আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাত পড়তো বা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো মার্কিন শ্রমনীতির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত হতো; এমন শঙ্কা থেকেই সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত এই আইনটি পাস করেনি। 

বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের অস্বস্তি এবং আপত্তি রয়েছে৷ যে কোন বাস্তবতাই হোক না কেন তারা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। কিন্তু শ্রমনীতি বা মানবাধিকার রিপোর্ট ইত্যাদি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এবং, সে কারণেই গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭