ইনসাইড পলিটিক্স

কষ্ট ছাড়া এমপি হতে চান তারা?


প্রকাশ: 07/12/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে আছে ১৪ দল। ১৪ দলের আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বহীন, দলের চেয়ে নেতারা। ১৪ দলের যে শরিকগুলো আছে সেই শরিকগুলোর সবগুলোর নাম ঠিকঠাকমতো জনগণ বলতে পারে না। এই সমস্ত দলের কোনও কাউন্সিল হয় কিনা? নেতা নির্বাচন কীভাবে হয়? সে সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের কাছে কোন তথ্য নেই। এই সমস্ত দলের নেতারা জন্ম-জন্মান্তরের জন্য দলের নেতৃত্বে আছেন এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন জাতি-গোষ্ঠীকে নিয়ে তারা দল গড়েছেন। আর এই দলগুলোর সাংগঠনিক শক্তি এমন দুর্বল যে, সারা দেশে তাদের কমিটি আছে কি না, তা তারা নিজেরাও বলতে পারবেন না।

একটি সমাবেশ বা যেকোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে এই সমস্ত দলগুলো গড়ে ১০০ জন কর্মী জোগাড় করতে পারবে কি না, সে নিয়েও কারও কারও সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু ভোট এলেই দলগুলোর আবদার বারে, বারে দরবার।

এবার ১৪ দলের শরিকরা বিশটি আসন চেয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলের শরিকদের দশটি আসন ছিল। ওই দশটি আসনে তারা কীভাবে জয় পেয়েছিলেন সেটা তারা নিজেরাও জানেন। 

একটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আদর্শ থাকে, নিজস্ব দলীয় প্রতীক থাকে। তারা নির্বাচন কমিশনে যখন নিবন্ধিত হন তখন তারা দলীয় প্রতীক নির্ধারণ করে দেন এবং সেই প্রতীক নিয়ে তাদের নির্বাচন করার কথা। কিন্তু, ১৪ দলের শরিকরা কেউই নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। কারণ তারা জানেন যে, নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে তাদের কি হাল হবে। তারা চান আওয়ালী লীগের প্রতীক নৌকা।

আওয়ামী লীগ দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল, বৃহত্তম রাজনৈতিক দলও বটে। এই দলটির তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি রয়েছে, রয়েছে কর্মীবাহিনী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের সংখ্যাও বাড়-বাড়ন্ত। লোভেই হোক আর অন্য কোনো প্রাপ্তির আশাই হোক, দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সংখ্যা অনেক। কাজেই একটি আসনে যখন আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হয় বা জাসদ কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টির কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়, তখন সেই এলাকায় সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নেতারা মনোক্ষুণ্ণ হন এবং পরবর্তীতে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাই সবসময় চান যে, যারা শরিক আছেন তারা নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করবেন তাদের অবস্থান থেকে।

যেমন ধরা যাক, ১৪ দলের শরিক জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল)। হাসানুল হক ইনু যদি কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করেন, তাহলে কেন তিনি মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন না? কেন তাকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে? এবার নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ করছেন না, কাজেই এই নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য শরিকরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে করতো তাহলে নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হত, ভোটারদের অংশগ্রহণ হত। কিন্তু, শরিকরা সেই ঝুঁকি নিতে রাজি নন, কারণ কী?

কারণ একটাই যে, তারা জানেন এরকম নির্বাচন করলে তাদের কারও-ই জয়ী হওয়া নিঃসংশয় নয় বরং তারা জয়ী হতে পারবেন কি না; এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর এই কারণেই তারা এই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চান না। তাদেরকে সব প্রতীকে নির্বাচন করতে গেলে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে, কষ্ট করতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে। কিন্তু, এই কষ্ট করতে তারা রাজি নন। তারা চান কষ্ট ছাড়া এমপি হতে।

কষ্ট ছাড়া এমপি হওয়ার জন্য তাদের বাহানার ফর্দ দীর্ঘ হচ্ছে। তারা নৌকা প্রতীকে যেমন প্রার্থীকে বসিয়ে দিতে চান, ঠিক তেমনই ওই আসনে যেন আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকে সেটিরও নিশ্চয়তা চান। এমনকি নির্বাচনে যেন তাদেরকে প্রশাসন এবং অন্য মহল সহায়তা করে সেটিও চান।

অর্থাৎ এমন একটি পরিস্থিতি তারা চান, যেখানে তারা বাধাহীনভাবে এমপি হতে পারবেন। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে কি এমন ভাবনা থাকা উচিত?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭