ইনসাইড পলিটিক্স

সালমান না আরাফাত: কাকে ছাড়বে আওয়ামী লীগ?


প্রকাশ: 08/12/2023


Thumbnail

জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে আসন সমঝোতা নিয়ে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি এবার নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। জাতীয় পার্টি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না থাকে তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। এটা ভাল মতোই বুঝতে পেরেছে জাতীয় পার্টি। আর তাই তাদের আবদারের শেষ নেই। প্রকাশ্যে তারা বলছে যে, তারা সাবালক সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগির মধ্যে তারা নেই। নিজেদের শক্তিতে তারা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু গোপন আলাপ আলোচনায় তারা অন্তত ৩০টি আসনে ছাড় চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে। জাতীয় পার্টির শর্ত হল, যে সমস্ত আসনগুলোতে জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে হবে সে সব আসনে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। শুধু তাই নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যারা শক্তিশালী তাদেরকেও বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি৷ তাছাড়া আওয়ামী লীগ এ রকম ২০ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে রাজি। কিন্তু জাতীয় পার্টি চায় আরও বেশি। 

যে সমস্ত আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তার মধ্যে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলামের দুটি আসন অন্যতম। সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং নারী কোটা এমপি। তিনি সাবেক মন্ত্রীও ছিলেন। তিনি ঢাকা-১ এবং ঢাকা-১৭ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে তিনি মনোনয়নও জমা দিয়েছেন। 

জাতীয় পার্টির সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সালমা ইসলাম দুটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে কোনো একটি আসন তাদেরকে দেবে। কে কীভাবে এই আশ্বাস দিয়েছিল সে সম্পর্কে জাতীয় পার্টির নেতারা মুখ খুলছেন না। তবে জাতীয় পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি তাদেরকে এই প্রস্তাব দিয়েছিল। এখন আলোচনার টেবিলে সালমা ইসলামকে কোনো আসন ছেড়ে দেওয়া হবে এটি মুখ্য হয়ে উঠেছে। 

আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে দুটি আসন ছেড়ে দিতে চায়। ঢাকা-৪ এবং ঢাকা-৬। এই দুটি আসনের একটিতে অর্থাৎ ঢাকা-৪ এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানম যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয় তাহলে তিনি বসে যাবেন। আর ঢাকা-৬ সাঈদ খোকন জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হলে তারও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাদ সেধেছে অন্য জায়গায়। জাতীয় পার্টি ঢাকা-১ অথবা ঢাকা-১৭ যে কোনো একটি আসন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে চায়। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বসে যেতে হবে। ঢাকা-১ এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং নীতিনির্ধারকও বটে। 

অন্যদিকে ঢাকা-১৭ আসনে মোহাম্মদ আলী আরাফাত আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তিনি চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। মাত্র কয়েক মাসের জন্য তিনি এমপি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজেই এই সময় যদি আওয়ামী লীগ এই আসন ছেড়ে দেয়, তাহলে তার প্রতি অবিচার হবে। তাছাড়া  আরাফাত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং সাম্প্রতিক সময়ে যারা টকশোতে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন তাদের মধ্যে আরাফাত একজন। এই দুইজনই আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ দুজনের একজনকে ছাড়তে চায় না। কিন্তু জাতীয় পার্টি এখন অনড় অবস্থানে রয়েছে। তাদের বক্তব্য ঢাকা-১ অথবা ঢাকা-১৭ যে কোনো একটি আসন ছেড়ে দিতে হবে। 

সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা। আর একারণেই এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করবে, কাকে ছাড়বে, নাকি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে এই দুটি আসন বাদে অন্য আসন সমঝোতা করবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭