ইনসাইড পলিটিক্স

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসাতে মরিয়া দলীয় প্রার্থীরা


প্রকাশ: 08/12/2023


Thumbnail

এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রায় সব আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। শুধু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না, বিভিন্ন আসনে অনেক জনপ্রিয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরাও এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তার ফলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এখন নির্বাচন জমজমাট হয়ে গেছে। যা জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে একটি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই আগ্রহে জল ঢালার জন্য সচেষ্ট দলীয় প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত প্রার্থীরা এলাকায় দুর্বল এবং যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছেন, সেই সমস্ত আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসানোর জন্য মরিয়া তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল যে, এ ব্যাপারে দলীয় নির্দেশনা আদায় করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসানো যাবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেউ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। এরপর আওয়ামী লীগের নেতারা ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছেন। তারা বিভিন্ন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতার কাছে ধর্না দিচ্ছেন। তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য আদায় করে নিচ্ছেন। 

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা স্বীকার করেছেন যে, এই ধরনের বক্তব্যগুলো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপন্থি। 

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কাজ করতে পারবে না। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের কোনো মহলে হয়নি এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একই ভাবে আব্দুর রহমান বলেছেন যে, নৌকার বিরুদ্ধে যদি আওয়ামী লীগের কর্মীরা কাজ করে সেটা হবে সংগঠন বিরোধী তৎপরতা। এই ধরনের বক্তব্যেরও কোন যৌক্তিকতা নেই। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদেরকে দিয়ে মনোনীত প্রার্থীরা এ ধরনের বক্তব্য দেওয়াচ্ছেন, যাতে কর্মীরা বিভ্রান্ত হন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে হতোদ্যম হয়ে পড়েন। 

তৃতীয় যে কৌশলটি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা গ্রহণ করছেন তা হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া। বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী টাকার লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে ওই প্রভাবশালী নেতা এ ধরনের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, এবার টাকা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসানোর সুযোগ খুব কম। কারণ যারা স্বতন্ত্র হয়েছেন তারা সবাই মোটামুটি প্রভাবশালী এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা জেনে বুঝে স্বতন্ত্র হয়েছেন। গুরুত্বহীন দু একজন হয়তো টাকা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু সব প্রার্থীকে বসানো সম্ভব হবে না। 

চতুর্থত, যে কাজটি দলীয় মনোনীত প্রার্থীরা করছেন তা হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে ভয় ভীতি প্রদর্শন, মামলার হুমকি এবং ইত্যাদি দিয়ে তাদের কোণঠাসা করা। কিন্তু একযোগে বিভিন্ন থানার ওসি বদল এবং প্রশাসনে রদবদলের কারণে সেই সুযোগ কমে গেছে। তারপরও দলীয় প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য যে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন। ওই দিনই বোঝা যাবে যে দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা সফল হলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭