ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের আগে শেষ বাধা পেরোলো আওয়ামী লীগ?


প্রকাশ: 09/12/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনের আগে সকলের দৃষ্টি ছিল ১০ ডিসেম্বর। এই দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে কী ধরনের মতামত দেয় তার ওপর নির্ভর করছিল অনেক কিছুই। বিএনপি এবং সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কেউ কেউ বলছিলেন যে, মানবাধিকার দিবসেই বিএনপির সমাবেশে হামলা, বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ইত্যাদির ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সুস্পষ্ট অবস্থান জানাবে এবং এজন্য বাংলাদেশ সরকার এবং কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ওয়াশিংটন থেকে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের নাম নেই। 

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর কোন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা নেই। এখন আর যাই হোক, নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বাধা দেবে না, বরং তারা নির্বাচন কেমন হচ্ছে, কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে সেই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করবে। যা কিছু করার নির্বাচনের পরে করবে। কাজেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে কি না—এ নিয়ে কিছু কিছু মহলের মধ্যে যে সংশয় সন্দেহ ছিল তার কেটে গেল বলেই অনেকে মনে করছেন। 

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে গত দুবছর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা রকম হুমকি এবং নির্দেশনা দিয়ে আসছিল। এই নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। সে লক্ষ্যেই বিভিন্ন মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। আর এই সমস্ত বৈঠক থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশে যদি কোন একতরফা নির্বাচন হয়, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই গত দু মাস ধরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত একাধিকবার কথা বলে। 

অনেকেরই ধারণা, মার্কিন মনোভাব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতি চেয়েও ভারতের কূটনীতি বেশি কার্যকর হয়েছে। আর এরকম প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। ডোনাল্ড লু'র একটি চিঠি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সংলাপ হয়নি। নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা উদ্বেগজনক ভাবে কমে যায়। সেই সময় অনেকে বলেছিল যে, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্য দিক থেকে বাংলাদেশকে ধরবে। শেষপর্যন্ত নির্বাচন হবে না। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুল তো ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে হচ্ছে না। 

বিএনপি-জামায়াতের দুটি আশার জায়গা ছিল। প্রথমত, তারা মনে করেছিল যে, জো বাইডেনের যে নতুন শ্রমনীতি সেই শ্রমনীতির আওতায় বাংলাদেশের গার্মেন্টস নিষেধাজ্ঞায় পড়বে এবং এ নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেবে। নির্বাচন বানচাল হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন শ্রমনীতির নিয়ে বাংলাদেশের সময়োপযোগী পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পেরেছে। নতুন যে শ্রম আইনের সংশোধনী সেই শ্রম আইনের সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতি মো: শাহাবুদ্দিন স্বাক্ষর করেননি। ফলশ্রুতিতে আপাতত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের পোশাক খাত বড় ধরনের কোনো আক্রান্তের শিকার হবে না বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। 

বিএনপির দ্বিতীয় আশার জায়গা ছিল যে, মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনবে। ফলে সরকারের জন্য নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়বে কিন্তু সেটি হয়নি। এখন অনেকেই মনে করছেন যে, নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর কোন পদক্ষেপ নেবে না। এখন অপেক্ষায় থাকবে নির্বাচন কেমন হয়, কীভাবে হয়। কাজেই নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সেই অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে গেল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭