ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্বব্যাপী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কতটা প্রভাব রাখে?


প্রকাশ: 09/12/2023


Thumbnail

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পরাশক্তি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তাদের স্বার্থ বিদ্যমান। এ কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে থাকে তারা। এই প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের একটি বলয় তৈরি করে রাখে দেশটি।

 বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাকে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে অসমর্থ বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সেসব দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে দেশটির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষায় বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে মার্কিন প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা হতে পারে পুরো দেশের ওপর অথবা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর। এ নিষেধাজ্ঞা সামাল দেওয়া ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। 

সাধারণত মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসবাদ ও আর্থিক গোয়েন্দা শাখার বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী মার্কিন এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ও কার্যকারিতা ঠিক কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে প্রায়ই।

মূলত নিষেধাজ্ঞা দেওয়াও মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কোনো দেশ, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বিদেশে থাকা সেই দেশ বা ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করা হয়ে থাকে। ফলে দেশের বাইরে থাকা সম্পদ ব্যবহার করতে পারে না নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি। অনেক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আওতায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন। ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পদের পাশাপাশি তার পারিবারিক সম্পদও আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। এছাড়া সে ব্যাক্তি ও তার পরিবারের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রসহ এর পাশাপাশি একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা দেশগুলোতে ভ্রমন করতে পারেনা। 

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও শ্রমিকদের স্বার্থ ও অধিকার সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে সে দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্থগিত করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে অর্থনৈতিকভাবে একটি বড় ধাক্কা খায় নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশটি। বিশ্বের সাথে বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছোট দেশগুলোর জন্য এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন।  

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশটির পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সবসময় এসব নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হয় না। অনেক সময় এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো আরও ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলে। যেমন রাশিয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে এখনো সাবলীল অবস্থায় রয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন দেশে নিষেধাজ্ঞা দিলে তা একই সঙ্গে কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় মার্কিন মিত্ররাও কার্যকর করে থাকে। ফলে কোনো দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা মানে একই সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ে যাওয়া। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইরান, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবার মতো দেশগুলো। ফলে এ দেশগুলো চীন ও রাশিয়ার সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করেছে। 

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফরেইন রিলেশনসের জিওইকোনমিকস বিভাগের সিনিয়র পলিসি ফেলো আগাথি ডেমারাইস জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাষ্ট্রগুলো মার্কিন স্বার্থবিরোধী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে। ফলে বিভিন্ন দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়লে তারা ক্রমেই চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে থাকে। 

তবে অপেক্ষাকৃত ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য এ নিষেধাজ্ঞা সামাল দেওয়া কঠিন। তাই ছোট দেশগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। তবে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কার্যকর হয় না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭