ইনসাইড বাংলাদেশ

১০ ডিসেম্বর: বিজয়ের দিন গণনার পালা


প্রকাশ: 10/12/2023


Thumbnail

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অনেকস্থান হানাদারমুক্ত হয়। বিজয় চূড়ান্ত হওয়া আগেই উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। বিজয়ের প্রাক্কালে তাই ১০ ডিসেম্বর একটি ঘটনাবহুল দিন।

যুদ্ধে শেষ পর্যায়ে এসে এই দিনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, 'সব ধর্মের মানুষই সমানভাবে আমাদের ভাই। এই মহান আদর্শ রক্ষার জন্য আপনারা এবং আমরা সংগ্রাম করছি। শত্রুরা এক ধর্মীয় যুদ্ধের মিথ্যা ও সর্বনাশা জিগির তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষ বেশিরভাগই মুসলমান এবং তারা ইসলামাবাদের সামরিক শাসকদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।’

ওই ভাষণে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আরও বলেন, ‘সব ধর্মের মানুষ সমানভাবেই আমাদের ভাই আর তাই এই মহান আদর্শ রক্ষার জন্য আপনারা ও আমরা যুদ্ধ করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে, যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত ১ কোটি শরণার্থী নিজেদের ভিটায় ফিরে যেতে পারবে।'  

অন্যদিকে তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ ঢাকায় রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সূচনা হয়। এদিন শান্তিনগরের চামেলীবাগের ভাড়া বাড়ি থেকে প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

একই দিনে 'অবরুদ্ধ ঢাকা শহর থেকে বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া বিমান ঢাকায় অবতরণের আগে কলকাতায় অবতরণ করতে হবে' বলে ভারত সরকার বিদেশি বিমানগুলোর ওপর যে নির্দেশনা জারি করেছে তা প্রত্যাহার করতে ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ করে জাতিসংঘ ও ৭টি দেশ। এই দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। 

মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক লেখনী থেকে জানা যায়, ১০ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে জামালপুরে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হরদেব সিং ক্লেয়ারের নির্দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুলতান মাহমুদের আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে জহিরুল হক মুন্সীকে পাঠানো হয়। আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে গেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চিঠি বহনের অপরাধে বাহক কৃষকের বেশে যাওয়া দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক মুন্সীর ওপর চরম পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে তিনি উপস্থিত বুদ্ধিমত্তায় বেঁচে গেলে পাকিস্তানি কমান্ডার সুলতান মাহমুদ ৭ পয়েন্ট ৬২ চাইনিজ সাব-মেশিনগানের বুলেট একটি কাগজে মুড়ে পাঠিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এরপর মুক্তিবাহিনী জামালপুর শহর দখলের লক্ষ্যে হানাদার বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। একইসঙ্গে চলে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলা। 

মহান যুদ্ধের এই দিনে ঢাকার সাভারের নয়ারহাটে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিমান রেডিও ট্রান্সমিশনের ওপর বোমা হামলা চালালে বেতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটানা বিমান হামলায় চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটা জাহাজে করে পাকসেনারা পালাবার সময় বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে হানাদার বাহিনী সিঙ্গাপুরে পালাবার পথে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। দিনাজপুর, রংপুর এবং সৈয়দপুরে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সব রসদ বন্ধ করে দেয়।  ভোলা হানাদারমুক্ত হয়। এর আগের দিনই মুক্তিবাহিনী দ্বীপজেলা ভোলার শহর চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। একই দিনে মাদারীপুর, নড়াইল মুক্ত হয়। অনেক পাক সেনা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণও করে। 

খুলনার বটিয়াঘাটায় মুক্তিবাহিনীর একটি দল স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর হামলায় ২ জন রাজাকার নিহত হয়। একজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়।  ১০ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় ময়মনসিংহ। সিলেটে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী একে একে কুরিগাঁও, বাদাঘাট, মিতিমহল, নোয়াগাঁও ও চালতাবাড়ি মুক্ত করে।  

১৯৭১ এর ১০ ডিসেম্বর খুলনায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট আরেফিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা বেতার ভবন আক্রমণ করে। এসময় সেখানে মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল। দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একই দিন বগুড়ার শান্তাহার রেলস্টেশনে বোমা হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান। এসময় স্টেশনে থাকা বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা নিহত হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭