ইনসাইড পলিটিক্স

কেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে উদার শেখ হাসিনা?


প্রকাশ: 10/12/2023


Thumbnail

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের নানা জনের নানা মত রয়েছে। নানা জন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে, এরকম আশঙ্কার কথা বলছেন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন কোনরকম বাধা বিঘ্ন ছাড়াই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই নির্দেশনা তিনি প্রশাসনকেও দিয়েছেন। 

বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে দেন দরবার করেছিলেন। এদের মধ্যে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র নেতারাও ছিলেন। কিন্তু এদের কারোরই বক্তব্য আওয়ামী লীগ সভাপতি আমলে নেননি। বরং তাদেরকে মৃদু তিরষ্কার করেছেন, ভর্ৎসনা করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়ার মতো ভাবনা যেন মাথা থেকে তারা নামিয়ে ফেলেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

প্রশ্ন উঠেছে যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কাজ করছে, যারা স্পষ্টতই নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগে বিভক্ত করেছে, সেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন শেখ হাসিনা উদার এবং কেন তিনি তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং তারা যেন নির্বাচনে থাকে তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। 

১. অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন: এবার নির্বাচনের যে আমেজ সারা দেশে তৈরি হয়েছে তার একটি বড় কারণ হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড়ানো। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তি যারা মনোনয়ন পাননি তারা স্বতন্ত্র হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা নানারকম ভাবে আলোচিত ব্যক্তিরাও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর ফলশ্রুতিতে যেটি হয়েছে যে নির্বাচনের মধ্যে জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যদি এই অবস্থা বজায় থাকে তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকটি আসন বাদ দিয়ে সবগুলো আসনই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটা দাপট হতে পারে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আর এর ফলে নির্বাচনে ভোটের উপস্থিতি বাড়বে। এটি আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি কৌশলগত অবস্থান। এ কারণেই তিনি স্বতন্ত্রদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। 

২. নিরপেক্ষ নির্বাচন: নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দরকার। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দরকার ভালো প্রার্থী। আর সেই ভালো প্রার্থী করার জন্য যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কারণ এর ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা দলীয় প্রার্থীরা প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম পাবেন এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য সুযোগ পাবে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

৩. আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অনেকের ধারণা যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫০ থেকে ৮০টি আসনে বিজয়ী হতে পারেন। কেউ কেউ মনে করছেন আরও বেশি আসনেই তারা বিজয়ী হতে পারে। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের এমপিরা নির্বাচনে হেরে গেছেন এরকম একটি ভাবমূর্তি নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত হবে। যে ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে উদারনীতি গ্রহণ করেছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে যেন কোনভাবেই বসিয়ে না দেওয়া হয় সে ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭